আজ দূর-দূরান্ত থেকে একে অন্যের সাথে যোগাযোগ কিংবা তথ্য আদান প্রদান সম্ভব হয়েছে কিন্তু এই বিকশিত ইন্টারনেট ব্যবস্থার জন্যই। আর, বিকাশের পিছনে প্রায় বহুদিন ধরেই ওয়াইফাই নামটি জড়িয়ে আছে। কিন্তু ওয়াইফাই সিগন্যাল যদি শক্তিশালী না হয়, তবে ইন্টারনেট ব্যবহারের কোন মজাই থাকে না।
মোবাইলে এমবি কিনে ইন্টারনেট ব্যবহার করা গেলেও মানুষ কেন ওয়াইফাই ব্যবহার করছে তা একটু এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে তাকালেই বোঝা যায়।
তবে, এই জনপ্রিয়তার সাথেও রয়েছে কিছু অপ্রিয় কথা।
ওয়াইফাই সিগন্যাল কিংবা ওয়াইফাই স্পীড বাড়ানো নিয়ে ইন্টারনেট প্রোভাইডারের সাথে মাঝেই মাঝেই আমাদের ঝামেলা লেগেই যায়। আবার, মাঝে মাঝে স্পীড কমে গেলে তো রীতিমতো তুলকালাম কাণ্ড হয়ে যায়।
আসলেই তো টাকা দিয়ে যে স্পীডের ওয়াইফাই নিয়েছি তা যদি না পাই, মাথা তো একটু খারাপ হবেই, তাই না?
কিন্তু ইন্টারনেট সরবরাহকারীর নেট স্পীড ঠিক থাকার পরও যদি এই সমস্যা বিরাজ করে, তাহলে কি করব একবারও এই সমস্যাটা নিয়ে ভেবেছি কি?
হয়তো না।
কিন্তু যদি এমন সমস্যা প্রতিনিয়তই হয়, তারপর তো মহা চিন্তায় পড়তে হবে। তখন?
চিন্তা নেই, আজকে আপনার জন্য থাকছে দারুণ কয়েকটি উপায় যার মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়াইফাই সিগন্যাল নিমেষেই বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
চলুন জেনে আসা যাক উপায়গুলো-
খুঁজে বের করুন কেন সমস্যাটি হচ্ছে?
হ্যাঁ, আপনার প্রথম কাজটিই হবে ওয়াইফাই স্পীড কয়েকবার চেক করা। কারণ, আপনি তা না করেই ইন্টারনেট প্রোভাইডারকে দোষ দিতে পারেন না। এজন্য প্রথমেই কয়েকবার তা চেক করুন।
যদি দেখেন স্পীড ঠিক নেই, সেক্ষেত্রে তাকে আপনি জানাতে পারেন এবং আপনার রাগের একটা কারণও তখন থাকে। কিন্তু, দেখেন যদি স্পীড ঠিক আছে, তখন কি করবেন?
সেক্ষেত্রে আর আপনার রাগ হলে চলবে না। বুঝতে হবে সমস্যাটা আপনার বাসায় সৃষ্টি হয়েছে। কিভাবে দূর করবেন?
ওয়াইফাই সিগন্যাল শক্তিশালি করবেন যেভাবে-
হ্যাঁ, উপরোক্ত সমস্যা ও এদের সমাধান নিয়েই পরবর্তী আলোচনা হতে যাচ্ছে, সাথেই থাকুন-
ভালো ক্ষমতা সম্পন্ন ওয়াইফাই রাউটার
উপরোক্ত সমস্যার মধ্যে শুরুতেই যেটি আপনার চোখে পড়তে পারে, সেটি হলো আপনি দেখতে পারবেন আপনার রাউটারে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এটি হতে পারে রাউটার রাখার স্থানের কারণে, কিংবা রাউটারের ক্ষমতা কম হওয়ার কারণে। মাঝে মাঝে ঠিকভাবে সংযোগ না দেয়ার কারণেও তা হতে পারে। তাই, শুরুতেই এই বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
এজন্য আপনার নতুন উচ্চ-ক্ষমতা সম্পন্ন রাউটার কেনাই শ্রেয়। রাউটার কেনার আগে বিশেষভাবে বিবেচনা করুন এই ৪টি বিষয়, তাহলে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রাউটার পেতে সমস্যা হবে না।
আর বাসা বাড়িতে তা লাগানোর ক্ষেত্রে বাড়ির মাঝখানের স্থানটিই নির্বাচন করবেন। আবার, তারবিহীন রাউটারের ক্ষেত্রে তার আশেপাশে যেন কোন বাধা যেমন দেয়াল বা অন্যকিছু না থাকে। এর মাধ্যমে আপনার স্পীড বাড়তে পারে।
আপনার রাউটারকে লুকিয়ে রাখবেন না!!
রাউটার এর ক্ষেত্রে যে বিষয়টির প্রাধান্য রাখা উচিত তা হলো স্থান নির্ণয়। আর স্থান নির্ণয় এর ক্ষেত্রে কখনোই বদ্ধ জায়গা নয়, বরং এমন একটি জায়গা নির্বাচন করুন যেখান থেকে সহজেই সিগন্যাল পুরো বাড়িতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এক্ষেত্রে টিভির পিছনে কিংবা কোনো আসবাবপত্রের পিছনে রাউটার রাখা থেকে দূরে থাকবেন। সবসময় খোলা জায়গায় রাউটার রাখুন যেখান থেকে অনায়াসেই সব জায়গা থেকে সিগন্যাল পাওয়া যায়।
Wi-Fi Extender কিনে ফেলুন
আপনার যদি একটি ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক দিয়েই আপনার পুরো একটি অফিস চালাতে চান, তবে Wi-Fi Extender হতে পারে আপনার জন্য এক অনন্য উপায়। তাছাড়া, আপনার বাসাটি যদি বড় হয়ে থাকে, অনেকগুলো রুম থেকে থাকে এবং সব রুম থেকেই বিভিন্ন ডিভাইসে ওয়াইফাই ব্যবহার করতে চান, তবে অবশ্যই আপনার Wi-Fi Extender ব্যবহার করা উচিৎ।
ওয়াইফাই রাউটারের বড় সিগন্যাল এরিয়া না থাকলেও W-ifi Extender দিয়ে খুব সহজেই ওয়াইফাই এর রেঞ্জ বাড়িয়ে নেয়া যায়। যদিও এতে করে আপনার ওয়াইফাই স্পীড বাড়বে না। তবুও অফিস কিংবা বাসার সব কোণায় ওয়াইফাই পৌছাতে এটি হতে পারে আপনার সমাধান।
ওয়াইফাই থেকে আপনার প্রতিবেশীদের হটিয়ে ফেলুন
আপনিও নিশ্চয় ওয়াইফাই নেয়ার সময় এমন সব অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন যে, আশেপাশের সবাই এসে পাসওয়ার্ড চাইছে। এমন সময় আপনি না দিলেও অনেকেই হ্যাক করে আপনার পাসওয়ার্ড জেনে যায়। আর তখন একাধিক ব্যবহারকারী হওয়ার জন্য স্পীড এবং সিগন্যাল উভয়ই কমে যায়। এমতাবস্থায় আপনার করণীয় কি?
আপনি এক্ষেত্রে আপনার ওয়াইফাই এর নিরাপত্তার জন্য WEP এর পরিবর্তে WAP ব্যবহার করতে পারেন। কেননা WAP encryption অনেক বেশি শক্তিশালী। এক্ষেত্রে, আপনার পাসওয়ার্ড হ্যাকেরও ভয় থাকবে না।
ফ্রিকুয়েন্সি চেক করুন
আপনার নেটওয়ার্কের Admin Interface এ চলে যান এবং এটা নিশ্চিত করুন যে আপনার Optimum Performance কনফিগার করা রয়েছে। এখানে আপনার যদি ডুয়াল ব্যান্ডের রাউটার হয়ে থাকে এবং ফ্রিকুয়েন্সি 5GHz হয়, তাহলে সব ঠিকঠাক আছে। কিন্তু যদি তা 2.4GHz হয়ে থাকে, আপনি তুলনামূলকভাবেই স্পীড কম পাবেন।
কেননা, 2GHz এর থেকে 5GHz অধিক স্পীড দেয়ার দাবি রাখে। কিন্তু সমস্যা এখানে একটাই, তা হলো 2GHz এর মতো এটি অনেক বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত থাকতে পারে না।
চ্যানেল পরিবর্তন করুন
আপনি যদি একটি জনবহুল এলাকায় বাস করে থাকেন, তবে ওয়াওফাই Admin Interface এর সঠিক ব্যবহার জানা আপনার জন্য আবশ্যক। কেননা এমন জায়গায় আপনার স্পীড বেশি থাকলেও আশেপাশে ওয়াইফাই এর সিগন্যাল অনেকটাই প্রভাব ফেলতে পারে।
ছোটবেলায় আপনি হয়তোবা ওয়াকিটকি দিয়ে খেলে থাকবেন। সেখানে কি হয়? অন্যের কাছ থেকে শোনার জন্য একই চ্যানেলে অবস্থান করতে হয়। একইভাবে আপনি যদি আপনার প্রতিবেশীর সাথে একই চ্যানেলে অবস্থান করেন, তবে ভিন্ন সেট ব্যবহার করলেও তাদের আলাপ-আলোচনা শুনতে পারবেন।
ঠিক একইভাবে ওয়াইফাই এর চ্যানেলও কাজ করে থাকে।
আপনি যদি আপনার প্রতিবেশীর মতো একই চ্যানেলে অবস্থান করেন, তবে তার ওয়াইফাই সিগন্যাল আপনার ওয়াইফাই এর উপর প্রভাব বিস্তার করবে। এতে করে স্পীড অনেকাংশেই কমে যেতে পারে। এ জন্যই আপনার ওয়াইফাই চ্যানেল পরিবর্তন করে নেয়া উচিত।
এন্টেনা সংযুক্তকরণ
আপনার ওয়াইফাই রাউটারের ভিতরে আগে থেকেই এন্টেনা সংযুক্ত থাকতে পারে। তবে, নতুন করে বহিঃসংযোগ এন্টেনা যুক্ত করলে আপনার স্পীড কিংবা ওয়াইফাই সিগন্যাল এর বৃদ্ধি হতে পারে অনেকাংশেই। আর যদি আগে তা আগে থেকে যুক্ত নাও থাকে, তারপরও নতুন করে এন্টেনা কিনে তা লাগাতে পারেন। এটা আপনার ওয়াইফাই সিগন্যাল এর ক্ষেত্রে এক বড় ভূমিকা রাখবে।
ওয়াইফাই সিগন্যাল অনেকটাই আপনার ব্যবহৃত রাউটার এর উপর নির্ভর করে থাকে। আর রাউটারের কারণেই ওয়াইফাই সিগন্যাল এর মূল সমস্যাটা দেখা যায়। তবে, শুধু যে এই সমস্যাই মূল তা কিন্তু নয়। এছাড়াও, আরো অনেক সমস্যা রয়েছে যা সম্পর্কে ইতোমধ্যে আপনি জেনে গেছেন। আর উপায়গুলোও হয়তো আয়ত্ত করতে পেরেছেন আশা করি এবং এগুলোর সঠিক ব্যবহার করলেই কিন্তু স্বাছন্দ্যে নিজের ওয়াইফাই চালাতে পারবেন ও মন মতো একটি সিগন্যাল পাবেন।
এরকমই সব নিত্যনতুন সমস্যার সমাধান পেতে হলে সাথেই থাকতে পারেন। আর উপরোক্ত পোস্ট সমন্ধিত কোন রকম প্রশ্ন থেকে থাকলে তা অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আর অতিরিক্ত প্রাপ্তি হিসেবে দূর্বল মোবাইল নেটওয়ার্কে ইন্টারনেটের স্পিড বাড়ানোর ৮টি কার্যকরী উপায় জেনে নিতে পারেন।
Leave a Reply