উইন্ডোজ ১০ এর সুবিধা সম্পর্কে এখন সবাই সম্যক অবগত। যারাই একবার এই অপারেটিং সিস্টেমটি ব্যবহার করেছেন, তারাই আর পুরনো কোনও ওএস-এ ফিরে যেতে চাইছেন না। আর যারা এখনো উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করেননি, তাদের অবশ্যই অন্তত একবার হলেও ব্যবহার করে দেখা উচিৎ।
মাইক্রোসফট্ ইনকর্পোরেশন এ যাবৎ অনেকগুলো অপারেটিং সিস্টেম রিলিজ দিয়েছে। তার মাঝে উল্লেখযোগ্য এবং সবচেয়ে বেশি পরিচিত অপারেটিং সিস্টেমগুলো হল-
- উইন্ডোজ এক্সপি
- উইন্ডোজ ৯৫
- উইন্ডোজ ৯৮
- উইন্ডোজ ৭
- উইন্ডোজ ৮
- উইন্ডোজ ৮.১
- উইন্ডোজ ১০
উইন্ডোজ ৯৫ ও উইন্ডোজ ৯৮ অনেক আগেই বিলুপ্ত, এখন আর কেউ ইউজ করে না। ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে উইন্ডোজ ৭ এর সব ধরণের সাপোর্ট বন্ধ করে দিয়েছে মাইক্রোসফট্। কেউ কেউ এখনো উইন্ডোজ ৮ কিংবা ৮.১ ব্যবহার করছেন। কিন্তু উইন্ডোজ ১০ এর সুবিধার কাছে এগুলো কিছুই না।
আসুন, উইন্ডোজ ১০ এর ১০টি সুবিধা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
উইন্ডোজ ১০ এর সুবিধা
সুবিধা-১: হাই স্পিড
উইন্ডোজ ১০ এর প্রথম সুবিধাই হচ্ছে এর স্পিড যা অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় অনেক হাই। উইন্ডোজ ৭ কিংবা উইন্ডোজ ৮ এর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ওপেন হতেই অনেক সময় লেগে যায়। এরপর স্টার্ট আপ মেন্যু ওপেন হতে আরো বেশি সময় লেগে যায়। কিন্তু উইন্ডোজ ১০ এর ক্ষেত্রে স্পিড নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। তবে ভুল ব্যবহারের কারণে স্পিড কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, উইন্ডোজ ১০ এর স্পিড বাড়ানোর সহজ কিছু উপায় আছে।
সুবিধা-২: সিকিউরিটি এন্ড ম্যানেজমেন্ট
উইন্ডোজ ১০ এর সিকিউরিটি এবং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এত স্ট্রং যে আপনাকে এ নিয়ে বিন্দু পরিমাণও মাথা ঘামাতে হবে না। শুধু তাই নয়, উইন্ডোজ ১০-এ আপনাকে কোনও অ্যান্টি-ভাইরাসও ইউজ করতে হবে না। এর বিল্ট ইন অ্যান্টি-ভাইরাস অর্থাৎ উইন্ডোজ ডিফেন্ডার অনেক স্ট্রং যা আপনাকে সব ধরণের ক্ষতিকর ভাইরাস, ম্যালওয়্যারসহ যাবতীয় সবকিছু থেকে রক্ষা করবে।
সুবিধা-৩: পুরনো স্টার্ট মেন্যুতে ফিরে আসা
সিকিউরিটি ভালনারাবিলিটি থেকে বাচার জন্যে এবং আরো কিছু অ্যাডভান্সড্ লেভেলের সুবিধা পাওয়ার জন্যে যারা উইন্ডোজ ৭ থেকে উইন্ডোজ ৮-এ এসেছিলেন, তারা স্টার্ট মেন্যু নিয়ে অত্যন্ত হতাশায় পড়েছিলেন। কারণ, উইন্ডোজ ৭ এর সেই সুন্দর আর পরিচ্ছন্ন স্টার্ট মেন্যুটি উইন্ডোজ ৮-এ এসে হারিয়ে গিয়েছিল। আর আনন্দের খবর যে, উইন্ডোজ ১০ সেই স্টার্ট মেন্যুকে আবার ফিরিয়ে এনেছে। যার ফলে, যারা আবার উইন্ডোজ ৭-এ ফিরে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন, তাদেরকে আর সেই ব্যাক ডেটেড অপারেটিং সিস্টেমে ফিরে যেতে হচ্ছে না।
সুবিধা-৪: কর্টানা – ভার্সুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট
কম্পিউটারের সাথে কথা বলা, কী দারুণ মজা! কম্পিউটার আপনার কথা শুনছে, আপনার আদেশ পালন করছে, আপনি যা যা করতে বলছেন তা তা করে দিচ্ছে! উইন্ডোজ ১০-এ এটি আপনার ভার্সুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট যার নাম কর্টানা। আপনি যখনই বলছেন, হে কর্টানা, গান বাজাও (Hey Cortana, play music), তখনই আপনার কম্পিউটারে গান বেজে উঠছে। আপনি যদি বলেন, হে কর্টানা, কম্পিউটার বন্ধ করো (Hey Cortana, Shut Down), তখনই পিসি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারের সুবিধা হিসেবে মুখে বলে কাজ চালানোর এই ব্যাপারটি দারুণ না!
সুবিধা-৫: অটোমেটিক সিস্টেম আপডেট
দীর্ঘদিন সিস্টেম আপডেট করা না হলে পিসির গতি কমে যায়। সফটওয়্যারগুলো পূর্বের ন্যায় ঠিক মতো কাজ করে না। ফলে, কম্পিউটারের প্রোডাক্টিভিটি লোপ পায়। তাই, সিস্টেম আপডেট রাখা জরুরী। কিন্তু বেশিরভাগ ইউজারের ক্ষেত্রেই সিস্টেম আপডেট দেয়ার কথা মনে থাকে না। আপনি যদি উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করেন, তবে মনে রাখার প্রয়োজনই নেই। কারণ, এটি অটোমেটিক আপডেট নেবে। তবে, যারা বিশেষ কোনও কারণে এটা চান না, তারা উইন্ডোজ ১০-এ অটো আপডেট বন্ধ করার উপায় জেনে রাখতে পারেন।
সুবিধা-৬: অ্যান্টি-ভাইরাসের প্রয়োজন নেই
উইন্ডোজ ১০ এ যাবৎ কালের সকল অপারেটিং সিস্টেমের মাঝে সর্বোচ্চ ভাইরাস প্রোটেকটেড। কাজেই, আপনাকে উইন্ডোজ এক্সপি বা উইন্ডোজ ৭ এর মতো এখানে কোনও ধরণের অ্যান্টি-ভাইরাস ব্যবহার করতে হবে না। উইন্ডোজ ১০ এর ডিফেন্ডারই আপনার কম্পিউটারকে সব ধরণের ভাইরাসের হাত থেকে হেফাজত রাখতে যথেষ্ট্য।
সুবিধা-৭: হাই লেভেল সিকিউরিটি
যে কোনও অপারেটিং সিস্টেমেরই কিছু না কিছু সিকিউরিটি সমস্যা রয়েছে। কিন্তু উইন্ডোজ ১০ এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সিকিউরিটি সমৃদ্ধ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। যদিও এর সিকিউরিটি সিস্টেম মূলত উইন্ডোজ ৮-এর আপগ্রেড ভার্সন, তবু আপনাকে কম্পিউটারের সিকিউরিটি নিয়ে ভাবতে হবে না। কারণ, উইন্ডোজ ১০ আপানাকে ৩ লেয়ারের সিকিউরিটি প্রদান করে থাকে। এগুলো হল-
- ডিভাইস গার্ড
- মাইক্রোসফট্ পাসপোর্ট
- উইন্ডোজ হ্যালো
সুবিধা-৮: এক্সবক্স অ্যাপ
আপনি যদি একজন গেম লাভার হয়ে থাকেন, তবে উইন্ডোজ ১০ এর সাথে Xbox এর ইন্টিগ্রেশন আপনাকে নি:সন্দেহে আনন্দিত করবে। এক্সবক্স অ্যাপ আপনাকে শুধু বন্ধুদের ও তাদের অ্যাচিভমেন্টের ট্র্যাক রাখতেই সহায়তা করবে না, বরং একই সাথে আপনি কনসোল থেকে পিসিতে গেম স্ট্রিমিং করতে পারবেন। এমনকি, এক্সবক্সের অন্যান্য প্লেয়ারদের সাথে আপনার পিসি থেকেই মাল্টি-প্লেয়ার মুডে বন্ধুদের সাথে কমপিট করতে পারবেন।
সুবিধা-৯: ওয়ান ড্রাইভ অন-ডিমান্ড সিন্কিং
কাজের সুবিধার জন্যে ক্লাউড স্টোরেজের ব্যবহার জরুরী। আর ওয়ান ড্রাইভ ক্লাউড স্টোরেজ উইন্ডোজ ১০ এর সাথে এত চমৎকার সিন্কিং সুবিধা দিচ্ছে যা আপনার কম্পিউটারের একটি রেগুলার ফোল্ডারের মতোই ব্যবহার করতে পারবেন।
সুবিধা-১০: ভয়েস টাইপিং
কম্পিউটারে লিখে লিখে কাজ করা এখন অনেকের কাছেই ক্লান্তিকর মনে হয়। ব্রাউজারে ভয়েস টাইপিং সুবিধা আসার পর থেকেই অনেককে এই আলসেমীতে পেয়ে বসেছে। চিন্তা নেই, উইন্ডোজ ১০-এ আপনি ব্রাউজারের মতোই ভয়েস টাইপিং করতে পারবেন। অর্থাৎ, আপনি কেবল মুখে বলবেন আর উইন্ডোজ আপনার হয়ে টাইপ করে দেবে। দারুণ না, বিষয়টা!
শেষ কথা
উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারের সুবিধা সমূহ জানলেন। আশা করি, এখন আর সেই মান্ধাতার আমলের অপারেটিং সিস্টেম সেভেনে পড়ে থাকবেন না। আর যদি উইন্ডোজ ৮ ব্যবহার করেন, তবে এক ধাপ এগিয়ে কেন টেন নয়? উপরোক্ত সুবিধাগুলো ছাড়াও আরো অনেক সুবিধা আছে উইন্ডোজ ১০-এ, ব্যবহার করেই দেখুন।
Leave a Reply