মার্কেটিংয়ের জন্য ইমেইল মার্কেটিং একটি শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। ইমেইল মার্কেটিং এতটাই কার্য্যকর একটি টেকনিক যে, এটি দ্বারা অল্প সময়ে অনেক গ্রাহকের কাছে পণ্য প্রচার করা যায়। ইমেইল মার্কেটিং ব্যবসা বিকাশে এবং গ্রাহকের সাথে ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যার কারণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইমেইল মার্কেটিংয়ের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে তাদের পণ্য বা সেবার অধিকতর প্রচারের জন্য। প্রতিষ্ঠানগুলো বা অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ইমেইল মার্কেটিং থেকে আয় করার জন্য এ বিষয়ে বিভিন্ন কাজ অন্যের কাছ থেকে করে নিচ্ছে।
ইমেইল মার্কেটিং সুযোগ দেয় আপনার ব্যবসা বড় করতে এবং নির্দিষ্ট কাস্টমারের কাছে পৌঁছতে। আধুনিক যুগে সবাই ইমেইল ব্যবহার করে। যার ফলে গ্রাহকের সাথে যোগাযোগ ভাল হয়। মূলত প্রতিটি ব্যবসার মোট মার্কেটিং কৌশলের একটি কেন্দ্রীয় অংশ ইমেইল মার্কেটিং হওয়া উচিত।
ইমেইল মার্কেটিং থেকে আয়
এটা স্বীকার করতেই হবে যে, ইমেইল মার্কেটিং থেকে আয় করার সেরা বছর ২০২০। বর্তমান সময়ে ইমেইল মার্কেটিং থেকে ভাল পরিমাণ আয় করার পদ্ধতিগুলো হল পিএসডি ইমেইল টেমপ্লেট তৈরি, এইচটিএমএল ও সিএসএস দিয়ে ইমেইল টেমপ্লেট তৈরি, পিএসডি থেকে এইচটিএমএলে কনভার্ট করে ইমেইল টেমপ্লেট তৈরি এবং ইমেইল কনটেন্ট লিখে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করা।
তবে এ-সব থেকে আয় করতে কাজগুলো কোথাও থেকে শিখে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাই ইমেইল মার্কেটিং থেকে আয় করার সহজ দুটি বিষয় ইমেইল লিস্ট তৈরি এবং এফিলিয়েশনের মাধ্যমে আয় করার পদ্ধতি আলোচনা করা হল।
ইমেইল মার্কেটিং কি?
ইমেইল মার্কেটিংয়ের সংজ্ঞা হল ইমেইলের মাধ্যমে নির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে পণ্য বা সেবা প্রচার করা।
কেন করবেন:
- বিক্রয় করতে
- গ্রাহকের সাথে আবদ্ধ হতে
- গ্রাহক অর্জণ করতে
- লিড জেনোরেট করতে
- গ্রাহক ধরে রাখতে
- বিশ্বস্ততা অর্জণ করতে
ইমেইল মার্কেটিং কার্যকর কেন:
- স্প্যাম ফিল্টার উন্নত হওয়ায় পূর্বের মত স্প্যাম ইমেইলের বিস্তার না থাকায় এর বিশ্বস্থতা রয়েছে।
- নির্দিষ্ট সময়ে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যায়।
- অন্য টাইপের প্রচার যেমন ওয়েবসাইট, সোস্যাল মিডিয়া ইত্যাদির প্রচারগুলো গ্রাহক নাও পেতে পারে, তবে ইমেইল গ্রাহকের ইনবক্সে পৌঁছাবে।
- নির্দিষ্ট গ্রাহক টার্গেট করার সুবিধা।
- এটা নিয়মিত রাখা সহজ এবং অনেক বিষয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে হয়।
- যে কোনো ধরনের এবং আকারের ব্যবসার জন্য উপযুক্ত।
- অপেক্ষাকৃত সস্তা।
- অনেক অল্প সময়ে বেশী প্রচারের জন্য বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
ইমেইল লিস্ট তৈরি করে আয়
ওয়েবসাইটের জন্য:
- ওয়েবসাইটে পপআপ ফর্ম রাখতে হবে। এজন্য WordPressএর Lightbox Pop-up plugin ব্যবহার করতে পারেন।
- ওয়েবসাইটে সাবস্কাইবার ফর্ম রাখতে হবে। এক্ষেত্রে Mailchimp ব্যবহার করতে পারেন।
ওয়েবসাইট না থাকলে:
- এক্ষেত্রে সোস্যাল মিডিয়ায়, বিভিন্ন পোস্টে কমেন্ট, ফোরাম পোস্ট করে এবং ল্যান্ডিং পেজের মাধ্যমে এফিলিয়েট প্রচারের সময় ইমেইল সাবমিট ফর্ম রাখতে হবে। ল্যান্ডিং পেজের জন্য Dreamwaver ব্যবহার করতে পারেন।
যত সময় যাবে আপনার লিস্ট তত বড় হতে থাকবে। ইমেইলগুলো দিয়ে একদিকে যেমন আপনি এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন, অন্যদিকে তা Freelancer, Upwork, Fiverr রের মত মার্কেটপ্লেসে বিক্রি করে আয় করতে পারেন।
ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে এফিলিয়েশন:
১. প্রথমে ঠিক করে নিন কোন ধরনের বা কোন বিষয়ে ইমেইল প্রেরণ করবেন। যেমন:
- নতুন সেবা: ব্যবসায় নতুন পণ্য, সেবা অথবা ব্যবসা পরিবর্তন করার বিষয়গুলো জানানো।
- আপডেট: ব্যবসার কোনো অংশ আপডেট করলে তা জানিয়ে দেওয়া।
- ইভেন্ট: বিশেষ দিন উপলক্ষে প্রযোজনীয় জিনিস যা আপনার ব্যবসার অংশ।
- কো-মার্কেটিং: আপনি যদি কোনো মার্কেটারের সাথে যুক্ত হয়ে কোনো সেবা চালু করেন তা জানানো।
- কনফারমেশন: গ্রাহক কোনো বিষয় সম্পূর্ণ করলে।
- শুভেচ্ছা বা স্বাগত বা ধন্যবাদ: যখন গ্রাহক সাবস্ক্রাইব করে, কোনো সেবা নেয় অথবা অফার প্রেরণ করা।
- সময়ের অফার: একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলবে এমন অফার।
- বাদ হওয়া কার্ট: ক্রেতা কিনতে আগ্রহী ছিল, কিন্তু কোন কারণে ক্রয় সম্পূর্ণ করে নি। তাদের মনে করিয়ে দিতে ব্যবহৃত হয়।
- ভিডিও বা টিউটোরিয়াল: আপনার পণ্যের ভিডিও বা অনলাইনে টিউটোরিয়াল বিষয়ক।
এরপর পৃষ্ঠার ফ্রিকোয়েন্সি এবং এতে কি বার্তা দিবেন তা নির্ধারণ করতে হবে।
২. ইমেইল প্রেরণ সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ঠিক করতে হবে। ভাল প্রতিষ্ঠানগুলো সর্ম্পকে বলা হল (হিসাবগুলো প্রতিমাসের)
- Mailchimp: ২০০০ গ্রাহক এবং ১২০০০ ইমেইল প্রেরণের জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি।
- Vertical Respose: ১০০০ গ্রাহক এবং ৪০০০ ইমেইল প্রেরণের জন্য ফ্রি।
- GetResponse: ১৫$
- ActiveCampaign: ৯$
- Benchmark Email: ৯.৯৫$
৩. ইমেইলে বার্তা প্রেরণের জন্য পেজ (টেমপ্লট) ডিজাইন করুন, যদি না পারেন তবে তাদের দেওয়া টেমপ্লেট পরিবর্তন করে সাজিয়ে নিতে পারেন। সাজানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই কম্পিউটার এবং মোবাইল উভয়ের জন্য সাজাতে হবে। তবে মনে রাখবেন (১) এ আলোচিত প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা ডিজাইনের টেমপ্লট হবে।
৪. আপনার তৈরিকৃত ইমেইলটি প্রেরণের জন্য প্রস্তুত। প্রেরণের সময় খেয়াল রাখবেন, অটোমেটিক কতদিন পর পর ইমেইলটি প্রেরণ করলে গ্রাহক বিরক্ত হবে না।
৫. ইমেইল প্রেরণ করে আপনার ব্যবসার উন্নতি না হলে কাজগুলো বিশ্লষেণ করবেন এবং কোন ধরনের গ্রাহকে কোন ইমেইল দিচ্ছেন তা ভালভাবে দেখে নিবেন।
যে বিষয়গুলো মনে রাখবেন-
- নির্দিষ্ট গ্রাহকদের টার্গেট করুন
- প্রতিটি প্রচারে লক্ষ্য অর্জনের উপর দৃষ্টি রাখুন
- কখনো স্প্যাম করবেন না
- অহেতুক ইমেইল পাঠাবেন না
- নতুন ইমেইল সংগ্রহ করুন
- ইমেইলগুলো আকর্ষণীয় করে ডিজাইন করবেন
মার্কেটিংয়ের জন্য যদি আপনি ইমেইল মার্কেটিং গ্রহণ করেন এবং ক্রমাগত আপনার কাস্টমারকে বার্তা প্রেরণ করেন, তবে ইমেইল মার্কেটিং থেকে আয় আপনার ব্যবসাকে বাড়িয়ে দিবে। মনে রাখবেন এটা শুধু বার্তা প্রেরণ এবং পণ্য বিক্রি নয়, এটি গ্রাহকের সাথে র্দীঘমেয়াদি সর্ম্পক গড়ে তুলে। তাই এটা হচ্ছে লক্ষ্যে পৌঁছতে শক্তিশালী হাতিয়ার।
মিশ says
ইমেল মার্কেটং বিষয়ে অনেক ভাল একটা লেখা। যারা ইমেল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আয় করতে চান, তাদের জন্যে অত্যন্ত দরকারি একটি লেখা, হৈচৈ বাংলায় এ রকম আরো ভাল ভাল লেখা পাবো, আশা করছি।
Mahi says
ভাই, ইমেল লিস্ট সেল করার মতো কোনও ওয়েবসাইট আছে যেখানে আমি ইমেল বিক্রি করতে পারি? মার্কেট-প্লেস ছাড়া হলে ভাল হয়।
টি আই অন্তর says
ভাই মাহি, প্রথমত কমেন্টের রিপ্লে দিতে দেরী হওয়ার জন্যে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইছি। দ্বিতীয়ত, দু:খের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমাদের সোর্সে এ-রকম কোনও ওয়েবসাইট নাই। তবে, আপনি ইমেল লিস্ট থেকে ইনকাম করার ৫টি ভাল উপায় জেনে নিতে পারেন।
Nazmul says
খুব সহজ এবং সুন্দরভাবে ইমেল মার্কেটিং নিয়ে এই আর্টিকেলটি উপস্থাপনের জন্য ধন্যবাদ। ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে আমিও আগ্রহী কিন্তু ইমেল লিস্ট কিভাবে কালেকশন করবো, এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত পোস্ট দিলে উপকৃত হব।