বর্তমান বাজারে বেজেল লেস ডিসপ্লে ফোনের চাহিদা অত্যাধিক। ফোন নির্মাতা কোম্পানিরাও কাস্টমারদের চাহিদা মেটাতে বাজারে বেজেল লেস ডিসপ্লে সমৃদ্ধ নিত্যনতুন হ্যান্ডসেট বের করছে। আর এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে কোরিয়ান বেজড্ স্মার্টফোন কোম্পানির ইনফিনিক্স হট এস৩ যা ইতিমধ্যেই আফ্রিকা ও মিডল ইস্টে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
অনেকেই অল্প বাজেটের ভিতর দারুণ দারুণ ফিচার সমৃদ্ধ ভালোমানের একটি হ্যান্ডসেট নিতে চায়। কিন্তু দামের কথা চিন্তা করে পিছিয়ে যায়, বেজেল লেস স্মার্টফোন মানেই মোটামুটি দামি একটি ফোন, এই ধারণা এখন আর সঠিক নয়। এখন বাজারে অনেক কম দামের ভিতরেই ভালোমানের বেজেল লেস ডিসপ্লের ফোন পাওয়া যাচ্ছে। যারা কম বাজেটের ভিতর বেজেল লেস ফোন নিতে চান, তাদের জন্য ইনফিনিক্স হট এস৩ বেস্ট চয়েস হতে পারে।
এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রিলিজ পাওয়া এই ফোনটি ইতোমধ্যে আমাদের দেশেও অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফোনটির স্পেসিফিকেশনও অন্যসব দামি ফোনের মতই। ভাবছেন, দামি ফোনের সাথে কেনো তুলনা করছি? যদি অন্যসব দামি ফোনের মতই আপনি মাত্র ১৩ হাজার টাকার ভিতর বেজেল লেস ডিসপ্লে সহ ভালো কনফিগারেশনের একটি হ্যান্ডসেট পান, তাহলে কেনই বা দামি ফোনের সাথে তুলনা করবো না? যাইহোক, এবার স্পেসিফিকেশন দেখে নেওয়া যাক।
ইনফিনিক্স হট এস৩ এর সংক্ষিপ্ত স্পেসিফিকেশন
- অপারেটিং সিস্টেম : ৮.০ ওরিও
- ডিসপ্লে সাইজ : ৫.৬৫ ইঞ্চি
- প্রসেসর : কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৪৩০ অক্টা কোর
- ক্যামেরা : রেয়ার ক্যামেরা ১৩ মেগাপিক্সেল এবং ফ্রন্ট ক্যামেরা ২০ মেগাপিক্সেল
- র্যাম : ৩ জিবি/৪ জিবি
- স্টোরেজ : ৩২ জিবি/৬৪ জিবি
- ব্যাটারি : ৪,০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার
- কালার : Sandstone Black, Brush Gold
- বিশেষ ফিচার : দ্রুতগতির ফিঙ্গারপ্রিন্ট আনলক
ডিসপ্লে
ইনফিনিক্স হট এস৩ ফোনটিতে ৫.৬৫ ইঞ্চির (১৪.৩৫ সেন্টিমিটার) আইপিএস এলসিডি ৭২০*১৪৪০ পিক্সেলের প্রতি ইঞ্চিতে ২৮৫ পিক্সেল ঘনত্বের এবং ১৮:৯ অনুপাতের বেজেল লেস ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে। ডিসপ্লটিতে মূল বডির ৭৩.৯৬ শতাংশ স্ক্রিন রয়েছে। ডিসপ্লেতে ২.৫ডি কার্ভ গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু কোনোরূপ প্রটেকশন গ্লাস ব্যবহার করেনি। ফোনটিতে মাল্টি টাচ সুবিধাও দেওয়া হয়েছে।
প্রসেসর
প্রসেসর হিসেবে ইনফিনিক্স হট এস৩ তে ব্যবহার করা হয়েছে ১.৪ গিগাহার্জের কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৪৩০ অক্টাকোর প্রসেসর, যা হ্যান্ডসেটটিকে এত কম বাজেটের মধ্যেও সেরার তালিকায় নিয়ে এসেছে। ফোনটিতে অ্যাডরিনো ৫০৫ জিপিইউ ব্যবহার করা হয়েছে, তাই ফোনটিতে ভালোমানের গেম খেলা সম্ভব হবে। তবে অতটা হাই পারফরমেন্স পাওয়া না গেলেও মিড লেভেলের গেমারদের জন্য যথেষ্ট।
ক্যামেরা
ফোনটিতে রেয়ার বা ব্যাক ক্যামেরা হিসেবে পাচ্ছেন ১৩ মেগাপিক্সেলের এফ ২.০ এপেচার যুক্ত এবং ফ্রন্টে থাকছে ২০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা। রেয়ার ক্যামেরায় ডুয়েল এলইডি ফ্ল্যাশ এবং ফ্রন্ট ক্যামেরাতেও ডুয়েল এলইডি ফ্ল্যাশ দেওয়া হয়েছে। রেয়ার ক্যামেরাতে প্যানোরামা, এইচডিআর এবং বিউটি মোড থাকছে। ১৩ মেগাপিক্সেলের রেয়ার ক্যামেরার সাহায্যে ১০৮০পিক্সেল@৩০এফপিএস এ ভিডিও করা যাবে এবং ছবির কোয়ালিটিও যথেষ্ট ভালো এবং সার্প।
ফ্রন্ট ক্যামেরাতে আপনি ২০ মেগাপিক্সেলের সাহায্যে নিখুঁত সেলফি তুলতে পারবেন এবং বোকেহ ও বিউটি মোডের জন্য সেলফি হবে আরো আকর্ষনীয়। ফোনটির রেয়ার এবং ফ্রন্ট উভয় ক্যামেরাতেই আপনি ভালো পারফরমেন্স পাবেন এবং লো লাইটেও ক্যামেরা দু’টির পারফরমেন্স অসাধারণ।
র্যাম এবং স্টোরেজ
হট এস৩ এর একটিতে ৩ জিবি র্যাম এবং ৩২ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ দেওয়া হয়েছে এবং অপরটিতে ৪ জিবি র্যাম এবং ৬৪ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ দেওয়া হয়েছে। ফোনটিতে বাড়তি স্টোরেজ ব্যবহার করে ১২৮ জিবি পর্যন্ত এক্সটার্নাল স্টোরেজ সুবিধা পাওয়া যাবে।
নেটওয়ার্ক সংযোগ
Wi-Fi 802.11, b/g/n, mobile Hotspot, ব্লুটুথ v4.2, Mass storage device, ইউএসবি চার্জিং, microUSB 2.0, 3G, 4G, A-GPS, ডুয়েল ন্যানো সিম সাপোর্টেড।
অন্যান্য ফিচারসমূহ
Fingerprint, লাইট সেন্সর, Compass, Proximity sensor, Accelerometer, Gyroscope, এসডি কার্ড স্লট, 3.5 mm audio jack, Face ID, এবং OTG দেওয়া হয়েছে।
ব্যাটারি এবং দাম
ফোনটিতে ৪,০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের নন রিমুভেবল লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে এবং দামও মাত্র ১২,৯৯০ টাকা (৩ জিবি র্যাম)।
সুবিধা এবং অসুবিধা
এত কম দামের ভিতর ভালো ফোন পাওয়ায় ফোনটির সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই আছে। ফোনটিতে স্মার্ট লক দেওয়া হয়েছে, ফলে আপনি বারবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক খোলা ছাড়াই হাতে রাখা অবস্থায় ফোনটিতে নির্দিষ্ট টাইম সেট করে আনলক হওয়া রোধ করতে পারবেন। ফিঙ্গারপ্রিন্ট যথেষ্ট ফাস্ট।
ফোনটিতে নিজস্ব স্ক্রিন রেকর্ডার সফটওয়্যার দেওয়া হয়েছে। ৪,০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির ফলে আপনি একদিন ভালোভাবে ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন। তবে ফোনটিতে কোনো গোরিলা গ্লাস প্রটেকশন দেওয়া হয়নি, যারফলে প্রটেকশনে যথষ্ট ঘাটতি থেকে গেছে। বডি পুরোটাই প্লাস্টিকের দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ওভারঅল ফোনটি বেশ ভালোই বলা যায়।
কি ভাবছেন? এত কমদামের ভেতরে ফোনটি বেশ ভালোই। আপনি সেলফি ক্যামেরা ২০ মেগাপিক্সেল এবং রেয়ারে ১৩ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা পাচ্ছেন এবং ভালো ব্যাটারি ব্যাকআপ পাচ্ছেন। ফোনটিতে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরও পাচ্ছেন, সাথে যথেষ্ট র্যাম রয়েছে। তবে আমাদের দেশে শুধুমাত্র ৩ জিবি র্যামের স্মার্টফোনটিই পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমার মতামত, ১৩ হাজারের ভিতর ফোনটি একেবারেই পারফেক্ট। আপনার মতামত কি, তা কমেন্ট করে জানান।
Leave a Reply