হাল সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম হলো ইউটিউব। বর্তমানে বহু মানুষই তাদের মেধা ও দক্ষতার মাধ্যমে ইউটিউব ভিডিও তৈরী করে সকলের কাছে সমাদৃত হচ্ছেন। আর তাই এখন কিশোর, তরুন থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ইউটিউব ভিডিও তৈরির সফট্ওয়্যার দিয়ে ভিডিও এডিট করে তা আপলোড করে যাচ্ছেন। এখানে যার দক্ষতা আর সৃজনশীলতা যত বেশি সে তত বেশি জনপ্রিয়।
ইউটিউবে মাত্র কয়েকটি ভিডিও তৈরীর মধ্যেও অনেকেরই রাতারাতি তারকা বনে যাওয়ার মত রেকর্ডও কম নয়। এমনও কিছু ব্যক্তি রয়েছেন, ইউটিউব থেকে যাদের আয় বছরে মিলিয়ন ডলার। সাধারণ, বিউটি টিপস্ থেকে শুরু করে স্ট্রিট ফুডসহ নানা রকম বিষয় নিয়ে অনেকেই ইউটিউবে সফলতা পেয়েছেন।
তাই, আজকের দিনে যারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আয় করার উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তাদের জন্য এটি অনেক বড় একটা সুযোগ। কারণ ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে যে কোন একটি বিষয়ে প্রথমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। আর শুধু প্রশিক্ষণ গ্রহণই নয় বরং যত দিন না তারা উক্ত বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠছে, ততদিন কোন কাজ পাওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
ফলে অনেক নতুন ফ্রিল্যান্সারই এক সময় হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে ইউটিউব তাদের জন্য বড় একটি সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। মোটামুটি মানের একটি ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও ধারণ করার পর এডিট করে ইউটিউবে আপলোড করার মাধ্যমে তারা প্রাথমিকভাবে ইনকাম শুরু করতে পারেন।
চাইলে অন্যদের মতো আপনিও পারবেন আয় করতে, এর জন্যে আপনার একটি ইউটিউব চ্যানেল দরকার। সেই সাথে যদি ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করার সহজ উপায়গুলো জেনে রাখেন, তবে অবশ্যই আপনি সাফল্যের পথে এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন।
তবে সাফল্য পাওয়ার জন্যে দরকার ভাল মানের ভিডিও তৈরি করা আর মান-সন্মত ভিডিও তৈরির জন্যে দরকার সহজ কিন্তু ভাল মানের ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার। বিশ্বজুড়ে প্রায় সব ইউটিউবারদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় এমনই ২টি সফট্ওয়্যার নিয়ে আজকের আলোচনা।
ইউটিউব ভিডিও তৈরির সফট্ওয়্যার
প্রথমদিকে ইউটিউবের নিজস্ব একটি ফ্রি ভিডিও এডিটর ছিল যেখানে নতুন ইউটিউবারগণ সহজেই তাদের ভিডিওগুলো এডিট করে নিতে পারতেন। কিন্তু ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইউটিউব থেকে অফিশিয়ালি এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইন্টারনেট ভিত্তিক এই ভিডিও এডিটরে ৫০টি ক্লিপ, ৫০০ ইমেজ, সাউন্ড টাইটেল, ট্রানজিশন সহকারে প্রায় ১ ঘন্টার ভিডিও এডিটিং করা সম্ভব হতো। কিন্তু বিশেষ কিছু কারণে গুগল এই সেবা বন্ধ করে দেয়ার ফলে অনেক নতুন ইউটিউবারই বিপদে পড়ে যায়।
তবে সুখবর এই যে, ইন্টারনেটে এমন হাজারো ফ্রি ভিডিও সফট্ওয়্যার পাওয়া যায়, যা খুব কম সময়ে এবং কোন প্রকার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই আপনাকে প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং এর সুবিধা দিয়ে থাকে।
তাই চলুন দেরি না করে জেনে নিই ইউটিউব ভিডিও তৈরির সফট্ওয়্যার এবং এগুলির ফিচার সম্পর্কে।
Blender
ইন্টারনেটে ইউটিউবের ভিডিও এডিটিং করার মত যতগুলো ফ্রি সফট্ওয়্যার পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে ব্লেন্ডার অন্যতম। আর যারা ভিন্ন ভিন্ন ব্রান্ডের ডিভাইস বা অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন, তাদের জন্য সুখবর এই যে, এই সফট্ওয়্যারটি একই সাথে উইন্ডোজ, ম্যাক এবং লিন্যাক্স এর জন্য পাওয়া যায়।
এটি একটি ওপেন সোর্স প্রোগ্রাম, যার ফলে এটি আপনাকে এর সকল সুবিধা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহারের সুবিধা দেয়। ব্লেন্ডার মূলত ডিজাইন করা হয়েছিল থ্রিডি অ্যানিমেশন সফট্ওয়্যার হিসেবে। একই সাথে এটি অনেক শক্তিশালি ভিডিও এডিটিং টুলস সমৃদ্ধ। ইউটিউব ভিডিও তৈরির সফট্ওয়্যার এর মধ্যে আপনার যে যে বৈশিষ্টের প্রয়োজন রয়েছে তার সবটুকুই মেটাতে সক্ষম এই অত্যাধুনিক ওপেন সোর্স সফট্ওয়্যারটি।
এর মাধ্যমে আপনি ভিডিও এডিটিং এর যাবতীয় বেসিক সুবিধা যেমন, ভিডিও কাট, স্পেসিং ইত্যাদি করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি ভিডিও মাস্কিং এর মত জটিল কাজটিও খুব সহজেই করে ফেলতে পারবেন। এটি পরিচালনা করা এতটাই সহজ যে, অভিজ্ঞ এবং নতুন উভয়ের জন্যই এটি সমানভাবে উপযোগী। ভিডিও এডিটরটির উল্লেখযোগ্য ফিচারের মধ্যে রয়েছে:
- লাইভ প্রিভিউ, ওয়েভক্যাম, ক্রোমা ভেক্টরস্কোপ এবং হিস্টোগ্রাম ডিসপ্লে।
- অডিও মিক্সিং, সিঙ্কিং, স্ক্রাবিং এবং ওয়েভফর্ম ভিজুয়ালাইজেশন।
- ৩২ স্লট পর্যন্ত ভিডিও, ইমেজ, অডিও এবং ইফেক্ট যোগ করার সুবিধা।
- স্পিড কন্ট্রোল, লেয়ার অ্যাডজাস্টমেন্ট, ট্রান্সিশন, কি-ফ্রেম, ফিল্টার এবং আরো অনেক কিছু।
Lightworks
এটিও অনেক জনপ্রিয় একটি ভিডিও এডিটিং সফট্ওয়্যার যা উইন্ডোজ, ম্যাক ও লিন্যাক্স, ৩টি অপারেটিং সিস্টেমের জন্যই পাওয়া যায়। শক্তিশালী ভিডিও এডিটরের তালিকায় লাইটওয়ার্ক এর অবস্থান প্রথম সারিতে। এটি অনেক চমৎকার ফিচার সমৃদ্ধ যা বর্তমানের অনেক ভিডিও এডিটিং টুলেই থাকে না। এটির পেইড ভার্সন রয়েছে যার মূল্য প্রতি মাসে ২৫ ডলারের মত।
কিন্তু এর ফ্রি ভার্সনে যেসব ফিচার রয়েছে তা বেশিরভাগ ইউটিউব ভিডিও এডিটিং এর জন্য যথেষ্ট। আপনার যদি পেইড ভার্সন কেনার সামর্থ থাকে তাহলে আপনি এটির আরো বেশ কিছু অ্যাডভান্সড ফিচার উপােভাগ করতে পারবেন। এর ফ্রি ভার্সনে যেসব ফিচার রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- শক্তিশালী ভিডিও ট্রিমিং
- মাল্টিক্যাম সাপোর্ট
- ইউটিউবের জন্য ৭২০ পিক্সেল এক্সপোর্ট
- অনেক বেশি ভিডিও ফরম্যাট সাপোর্ট
যদিও এতে ইউটিউবের জন্য প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ ফিচারই উপস্থিত, তারপরেও নির্মাতারা ফোর কে ভিডিও সাপোর্ট সিস্টেমটি শুধুমাত্র তাদের পেইড কাস্টমারদের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছে। ব্লেন্ডার এর সাথে তুলনা করতে হলে বলতে হয় এটি অনেক বেশী দ্রুতগতি সম্পন্ন।
আপাত দৃষ্টিতে ভিডিও এডিটিং এর প্রক্রিয়াকে একটু জটিল মনে হতেই পারে। তবে আপনি যদি উপরে বর্নিত ইউটিউব ভিডিও তৈরির সফট্ওয়্যার ব্যবহার করে দেখেন, তাহলে অনুভব করতে পারবেন যে আসলে এডিটিং এর কাজটা কতটা সহজ। আমাদের দেশে কোন পূর্ব পরিচিতি ছাড়া খুব কমই নিজের প্রতিভাকে সবার সামনে তুলে ধরার মত অবকাশ পাওয়া যায়। যার ফলে অনেক প্রতিভাই অবিকশিত অবস্থাতেই ঝরে পড়ে যায়।
প্রতিভাকে তুলে ধরা যাতে কোন বিশেষ ব্যক্তি বা প্লাটফর্মের হাতে বন্দি না থাকে, তার জন্যেই ইউটিউবের সৃষ্টি। আর একারণেই ইউটিউবের স্লোগান হল ব্রডকাস্ট ইউরসেল্ফ। তাই বসে না থেকে দ্রুত এডিটিং শুরু করে দিন আর হয়ে উঠুন আগামীর সেরা ইউটিউব তারকা।
Md khayrul hasan says
অনেক ভাল মত কাজ করে সফটওয়্যার দুটি। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ইউটিউব ভিডিওর জন্যে দরকারি এ দুটি সফটওয়্যার নিয়ে আর্টিকেলটি লিখার জন্য।
md matin says
এগুলো কি মোবাইলে ব্যবহার করা যাবে? ফটো দিয়ে ভিডিও বানানো যাবে? কোনটি ডাউনলোড দিব ফটো দিয়ে ভিডিও তৈরির জন্য?
টি আই অন্তর says
আপনার প্রশ্নের জন্যে ধন্যবাদ, মোহাম্মদ মতিন ভাই। এই সফট্ওয়্যারগুলো মোবাইলে ব্যবহার করা অনেক কঠিন হবে। মোবাইলে ব্যবহারের জন্যে আপনি ভিডিও এই ১০টি এডিটিং অ্যাপস থেকে যে কোনটি ডাউনলোড করতে পারেন।