অনলাইন ভিডিওর জন্য ফ্রি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ওয়েবসাইট খুঁজে পাওয়াটা আসলেই দুষ্কর। একজন অনলাইন ভিডিও ক্রিয়েটর হিসাবে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন আপনার তৈরীকৃত ভিডিওগুলির জন্য সবচেয়ে ভালো ব্যাগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করতে।
কিন্তু একই সাথে মিউজিক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে যাতে কোন ধরনের কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। কারণ আপনার অনেক কষ্টে বানানো ভিডিওটি যদি কপিরাইট আইনের লঙ্ঘনের কারণে ইউটিউব সরিয়ে দেয় তাহলে হয়তো সেটিই হবে আপনার জন্য সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা।
তাই, ইউটিউবে কাজ করার আগে এর ভিডিও লাইসেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া ভাল। বিশেষ করে কোন কোন ক্ষেত্রে কপিরাইট ইস্যু রয়েছে, সেগুলো না জেনে কারো মিউজিক ব্যবহার করা থেকে আপনাকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। নৈলে আপনার কষ্টার্জিত ইউটিউব চ্যানেল ব্যান খেয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা ইতিপূর্বেই ২০১৮-২০১৯ সালকে ভিডিও মার্কেটিং এর বৈপ্লবিক যুগ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। আর বর্তমানে ভিডিও কন্টেন্টের চাহিদা দেখে বলা যায় যে তাদের অনুমান আসলেই সঠিক। বর্তমানে যতভাবে বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং ব্যবসায়িক প্রচারের জন্য ভিডিও ব্যবহার করা হয়, তা নিঃসন্দেহে পূর্বের যে কোন সময়ের চাইতে অনেক বেশি।
ফ্রি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ওয়েবসাইট
PewDiePie এর মত ইউটিউব থেকে ১১২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা আয় করা আমাদের দেশের কারো পক্ষে সম্ভব না হলেও মোটামুটি ভাল ইনকাম করা অবশ্যই সম্ভব। ইতিমধ্যে আমাদের দেশের অনেক ইউটিউবাররাই ভাল পরিমাণ আয় করছেন। আবার কেউ কেউ না জেনে কপিরাইটেড মিউজিক ব্যবহার করে বিপদে পড়ছেন, চ্যানেল হারাচ্ছেন।
আপনাকে যাতে এ ধরণের কপিরাইট ইস্যুতে পড়তে না হয়, সেজন্যেই আমাদের এই লেখা। এখানে আমরা এমন ৫টি ওয়েবসাইটের সন্ধান নিয়ে এসেছি যেগুলো থেকে ফ্রিতে যে কোন মিউজিক আপনার ইউটিউব ভিডিওতে ব্যবহার করতে পারবেন।
ফ্রি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহারের পূর্বে ফ্রি মিউজিক এবং রয়েলটি ফ্রি মিউজিক এর মধ্যকার পার্থক্যটা বুঝে নেওয়া জরুরী। কিছু কিছু ওয়েবসাইট আছে, যারা আপনাকে শুধুমাত্র শোনার জন্য তাদের ওয়েবসাইটে থাকা মিউজিকগুলিকে ফ্রি ডাউনলোড করার অনুমতি দেয়। ফলে আপনি এগুলিকে আপনার ইউটিউব ভিডিওর জন্যে ফ্রি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন না।
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসাবে ব্যবহার করার জন্য আপনাকে অবশ্যই কপিরাইট ফ্রি মিউজিক ব্যবহার করতে হবে। চলুন জেনে নিই এমন কিছু ওয়েবসাইট সম্পর্কে যেখানে ইউটিউব ভিডিওর জন্যে ফ্রি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক পাবেন।
ইউটিউব অডিও লাইব্রেরী:
এটি ইউটিউব ভিডিওতে ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। আপনি চাইলে এখানে থাকা বিভিন্ন মিউজিক এবং সাউন্ড ইফেক্ট সরাসরি আপনার ভিডিওতে ব্যবহার করতে পারবেন।
একই সাথে আপনি চাইলে সেগুলিকে অফলাইনে ব্যবহারের জন্যেও ডাউনলোড করতে পারবেন। এখানে কয়েক শতাধিক রয়েলটি ফ্রি মিউজিক বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সাজানো রয়েছে যা ব্যবহার করা সত্যিই অনেক সহজ।
এপিডেমিক সাউন্ড:
এপিডেমিক সাউন্ড ২০০৯ সালে ইন্টারনেটে আত্মপ্রকাশ করে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে যারা নিজেদের মিউজিক প্রকাশ করতে চায় এবং ইন্টারনেট থেকে যারা কপিরাইট ফ্রি মিউজিক সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে ইচ্ছুক, তাদের উভয়ের হয়েই এই ওয়েবসাইটি কাজ করে থাকে।
আমার দেখামতে কপিরাইট ফ্রি মিউজিক ডাউনলোড করার মত ওয়েবসাইটগুলির মধ্যে এটি অন্যতম।
ফ্রি ষ্টক মিউজিক:
প্রকৃতপক্ষেই এই ওয়েবসাইটটি তাদের নামকরণকে স্বার্থক করেছে। এখানে রয়েছে ফ্রি ষ্টক মিউজিকের এক বিশাল সংগ্রহশালা। কয়েক শতাধিকেরও বেশি মিউজিক ট্র্যাক বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ডাউনলোড করার সুবিধা থাকায় ইউটিউব ভিডিও ক্রিয়েটরদের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয়।
এখানে প্রায় প্রতিটি মিউজিক এমপিথ্রি, ওয়েভ এবং এইএফএফ ফরম্যাটে পাওয়া যায়। ফলে ভিডিও ক্রিয়েটরেরা তাদের পছন্দের মিউজিকের চাহিদা অনুযায়ী অডিও ফরম্যাট সহজেই ডাউনলোড করে নিতে পারেন।
ওয়েবসাইটটি থেকে মিউজিক ডাউনলোড করার জন্য কোন ধরনের সাইন-আপ করার প্রয়োজন হয় না। এখান থেকে ডাউনলোডকৃত গান ব্যবহারের জন্য কোন ধরনের এট্রিবিউশন বা প্রমোশনের প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ কোথা থেকে মিউজিক সংগ্রহ করা হয়েছে বা কে কম্পোজ করেছেন এমন কোন ক্রেডিট দেওয়া ছাড়াই এগুলিকে বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যাবে।
ইনকম্পটেক:
কপিরাইট ফ্রি মিউজিক ডাউনলোড করার জন্য এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট। পছন্দের ক্যাটাগরির মিউজিক খুঁজে বের করার জন্য এখানে রয়েছে অসাধারণ সার্চ এবং ফিল্টারিং এর ব্যবস্থা।
এখানে শতাধিক মিউজিক ট্র্যাক রয়েছে যা এমপিথ্রি ফরম্যাটে ডাউনলোডযোগ্য। বিশাল একটি মিউজিক লাইব্রেরী থাকার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত এই ওয়েবসাইটটি নতুন নতুন মিউজিক যোগ করার মাধ্যমে তাদের সংগ্রহশালাকে বর্ধিত করে চলেছে।
এখান থেকে ডাউনলোডকৃত গান ব্যবহারের জন্য এট্রিবিউশন জরুরী। অর্থাৎ বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই ক্রেডিট নোটে তাদের ওয়েবসাইটের নাম এবং কম্পোজারের নাম উল্লেখ করতে হবে।
যশ উডওয়ার্ড:
এটি ওয়েবসাইটটির ডোমেইন নেইম হওয়ার পাশাপাশি এটি এর প্রতিষ্ঠাতার নামও বটে। তিনি পেশায় একজন মিউজিশিয়ান যিনি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন মিউজিক রেকর্ড করে সেটিকে এই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকেন।
এখানে থাকা প্রতিটি মিউজিক তার ব্যক্তিগতভাবে কম্পোজকৃত। ওয়েবসাইটটিতে ১০টিরও বেশি অ্যালবাম ও প্রায় ২০০ এর মত গান ও মিউজিক রয়েছে যার সবগুলো মিউজিক এম্পিথ্রি ফরম্যাটে ডাউনলোড করা যায় বলে সহজেই ইউটিউব ভিডিওতে ব্যবহারের জন্য সত্যিই অসাধারণ।
এখানে থাকা প্রতিটি মিউজিক ক্যাটাগরি, থিম এবং মুডের ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে। এছাড়াও গানের নাম অনুসারেও সার্চ করার ব্যবস্থা রয়েছে। গানের টেম্পু এবং দৈর্ঘ্যরে উপর ভিত্তি করে ফিল্টার করা যায় বলে সহজেই চাহিদা অনুযায়ী মিউজিক খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
এখান থেকে ডাউনলোডকৃত গান ব্যবহারের জন্য এট্রিবিউশন ও সাইট প্রমোশন আবশ্যক। এই সাইটের গান ও মিউজিক ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই ওয়েবসাইটের নাম এবং কম্পোজারের নাম ক্রেডিট নোটে উল্লেখ করতে হবে।
ইউটিউবের বাড়তে থাকা চ্যানেলের সাথে সাথে ফ্রি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ওয়েবসাইট এবং মিউজিক ট্র্যাকের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে যারা নতুন চ্যানেল শুরু করেছেন তাদের জন্য একদিকে যেমন ফ্রি ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যার প্রয়োজন, অন্যদিকে প্রয়োজন ফ্রি মিউজিক। আর কোন কপিরাইট ইস্যু ছাড়া মিউজিক ব্যবহারের জন্যে উপরের ওয়েবসাইটগুলি খুবই উপযোগী। তবে যে কোন ওয়েবসাইট থেকে গান সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আমি আগেও বলেছি যে সব ফ্রি মিউজিকের ওয়েবসাইট কপিরাইট ফ্রি মিউজিক সাইট নয়। তাছাড়া কম বেশি প্রতিটি ওয়েবসাইটেরই তাদের গান ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম থাকে। যদি সেগুলি না মেনে আপনি মিউজিক ব্যবহার করেন, তবে অবশ্যই আপনাকে কপিরাইট লঙ্ঘনের দায়ে পড়তে হবে।
তাই মিউজিক ডাউনলোডের পূর্বে অবশ্যই সেগুলিকে ব্যবহারের নিয়ম ও শর্তাবলী দেখে নিন।
Md. Shagor13@email.com says
যারা ইউটিউবে কাজ করছেন, তাদের জন্যে দারুণ মিউজিক সোর্স হিসেবে কাজ করবে এই ওয়েবসাইটগুলো। আর যারা নতুন কাজ করছেন কিংবা কাজ করার চিন্তা-ভাবনা করছেন, তাদের জন্যে তো দারুণ সহায়ক একটি লেখা। আমি কি ইউটিউবে যুক্ত হতে পারি?