বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের খাবারের পছন্দের তালিকায় রয়েছে আখের রস। আখের রস যেমন সুস্বাদু ঠিক তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আখের রসের উপকারিতা অনেক যেগুলোর বেশিরভাগই ত্বক ও সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। আখের রসে থাকা নানা রকম ভিটামিন আমাদের স্বাস্থ্যকে সুঠাম ও ত্বককে সুন্দর করে তোলে।
আখের রসে যে-সব ভিটামিন ও মিনারেল আছে-
- জিংক
- পটাসিয়াম
- আয়রন
- ফসফরাস
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাগনেশিয়াম
- থায়ামিন
- রিবোফ্ল্যাবিন
- অ্যামিনো অ্যাসিড
এছাড়াও, আখের রসে রয়েছে আরও নানা রকমের উপকারী উপাদান। আসুন, জেনে নেই আমাদের সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর ত্বকের জন্য আখের রসের বেশ কিছু উপকারিতা ।
আখের রসের উপকারিতা
১. আখের রস পানি শূন্যতা দূর করে
শরীরে পানিশূন্যতা বা পানিস্বল্পতাকে বলা হয় ডিহাইড্রেশন। পানিশূন্যতার কারণে শরীরে ক্লান্তি ও মাথা ঘোরাতে পারে। সারাদিনে মাত্র এক গ্লাস আখের রস দিতে পারে আপনাকে এই পানিশূন্যতার হাত থেকে মুক্তি।
তাই, পানিশূন্যতা থেকে নিস্তার পেতে চাইলে সকলেরই আখের রস পান করা উচিত।
২. আখের রস হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
আখের রস নিয়মিত পান করলে তা আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আখের রসের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম যা খুব সহজেই আমাদের হজমের ক্ষমতা বাড়ায়।
বুঝতেই পারছেন, হজম শক্তি বৃদ্ধি করার কিছু প্রাকৃতিক উপায় এর মধ্যে রয়েছে আখের রসের মতো প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ।
৩. আখের রস শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয়
সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর ক্লান্ত শরীরে এক গ্লাস আখের রস পান করলেই আপনি পাবেন কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি। আখের রস আমাদের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং আমাদের শরীরের শক্তির ঘাটতি দূর করে।
তাই, নিস্তেজ না হয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করতে চাইলে আখের রস হতে পারে আপনার সমাধান।
৪. আখের রস ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বক মলিন হয়ে পড়তে শুরু করে। কিন্তু ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সবাই চায়! নিয়মিত আখের রস পান করলে আপনার ত্বক থাকবে সুন্দর ও স্বচ্ছ।
বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, আখের রসের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা আমাদের ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে। ত্বকের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে যে-সব ভিটামিন প্রয়োজন তার মাঝে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অন্যতম।
৫. দাঁতের যত্নে আখের রস
দাঁত আমাদের শরীরের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি অঙ্গ। সুন্দর ও মজবুত দাঁতের জন্য চাই দাঁতের সঠিক যত্ন নেওয়া। দাঁত ভালো রাখতে চাইলে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি আপনার খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন আখের রস।
আখের রসে উপস্থিত বিভিন্ন খনিজ উপাদান আপনার দাঁতের ক্ষয় থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারবে।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে আখের রস
ওজন কমানো বা ওজন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভাবছেন? তাহলে, আপনার এই সমস্যার সমাধানও দিবে আখের রস। শরীরচর্চার পাশাপাশি নিয়মিত আখের রস পান করলে আপনি আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
তাই, অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চিন্তিত না হয়ে আজ থেকেই আপনার খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন আখের রস।
৭. ক্যান্সার প্রতিরোধে আখের রস
দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সার নিরাময় করা হয়তো সম্ভব নয়। তবে, আমরা চাইলে কিছু নিয়ম অনুসরণ করে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারি। আখের রসে উপস্থিত বিভিন্ন এন্টি অক্সিডেন্ট আমাদের শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে।
তাই, ক্যান্সার প্রতিরোধে সকলেরই উচিত নিয়মিত আখের রস পান করা।
৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আখের রস
আখের রস যেমন উপাদেয়, তেমনি উপকারীও। আখের রস আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। মূলত, মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শ্বেত রক্ত কণিকা। আখের রসে উপস্থিত ভিটামিন ও মিনারেল আমাদের শরীরে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
তাই, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাইলে নিয়মিত আখের রস পান করা উচিত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার ১২টি উপায় এর মধ্যে একটি হচ্ছে আখের রসের মতো প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ।
৯. ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে আখের রস
অনেকেই মনে করেন, ডায়বেটিস রোগীদের জন্য আখের রস খাওয়া ক্ষতিকর। তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আখের রস মূলত ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই, ডায়বেটিস রোগীদের আখের রস খাওয়া উচিত।
তবে, সপ্তাহে কয়দিন বা কতোটুকু পরিমাণ মতো তারা আখের রস খাবেন, তা অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে।
১০. হৃদরোগ প্রতিরোধে আখের রস
হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক এমন একটি ঘাতক যা যে কোনো সময়ে যে কাউকে আক্রমণ করতে পারে। হার্টের স্বাভাবিক গতি কম বা বেশি হলেই মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়।
তবে, ডাক্তারদের মতে আখের রস আমাদের হার্ট ভালো রাখার পাশাপাশি হৃদরোগ উপশমেও সাহায্য করে থাকে।
১১. আখের রস শরীরের ক্ষত নিরাময় করে
আখের রস আমাদের শরীরের ক্ষত দ্রুত নিরাময় করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই, শরীরের কোন ক্ষত দ্রুত নিরাময় করতে চাইলে আখের রস হতে পারে আপনার জন্য সঠিক পানীয়।
১২. আখের রস নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ কমায়
আখের রস নিয়মিত পান করলে আমাদের নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ কমে। সাধারণত পুষ্টির স্বল্পতার কারণেই আমাদের নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। আখের রসে উপস্থিত বিভিন্ন খনিজ পদার্থ আমাদের দাঁতের ক্ষয় রোধ করার পাশাপাশি আমাদের নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধও দূর করে থাকে।
১৩. আখের রস ইমিউনিটি ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
আখের রস আমাদের শরীরের ইমিউনিটি ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। মানব দেহের ভেতরে থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলোকে বের করে দেয় এবং আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম উন্নত করে আখের রস।
১৪. আখের রস শর্করার চাহিদা পূরণ করে
আখের রসের মাঝে উপস্থিত শর্করা আমাদের শরীরের শর্করার চাহিদা মেটায়। আখের রসে প্রায় ১৫-২০ শতাংশ শর্করা থাকে।
১৫. আখের রস গর্ভাবস্থায় উপকারি
আখ হলো ভিটামিন ও খনিজের অন্যতম একটি উৎস। তাই গর্ভাবস্থায় আখের রস পান করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। আখের রসে এক প্রকারের এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা গর্ভাবস্থায় সম্ভাব্য মা’কে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
শেষ কথা
আখের রসের উপকারিতা জানলেন। প্রতিদিন আখের রস পান করা শুরু করলে নানা প্রকার উপকার পাওয়া যায়। অনেক রোগব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায় আখের রস পান করার মাধ্যমে। তবে, প্রতিদিন দুই গ্লাসের বেশি আখের রস খাওয়া অনুচিত।
আখের রস নিঃসরণের ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে পান করে নেওয়া উত্তম। তবে, ফ্রিজে রাখলে তা দেড় বা দুই ঘন্টা পর পান করলেও অসুবিধা নেই। এর চেয়ে অধিক সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে সে আখের রস আর পান করা উচিত নয়। কারণ, তখন সেই রসে এক প্রকার বিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। সর্বোপরি, প্রতিদিন নিয়মিত এক বা দুই গ্লাস আখের রস সকলেরই পান করা উচিত।
Leave a Reply