অ্যান্ড্রয়েড কিউ এর নতুন ফিচার আপনার অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারের অভিজ্ঞতাতে নতুন মাত্রা যোগ করাতে যাচ্ছে। যদিও এখনো অ্যান্ড্রয়েডের অফিসিয়াল ভার্সন রিলিজ হয়নি, তবে অ্যান্ড্রয়েডের বেটা ভার্সনগুলোর মাধ্যমে বেশ অনেকগুলো নতুন ফিচার সম্পর্কে জানা গিয়েছে।
প্রতিটি নতুন ভার্সনে অ্যান্ড্রয়েড নতুন নতুন বেশ কিছু চমকপ্রদ ফিচার যোগ করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ার পর আশা করি আপনি অ্যান্ড্রয়েডের নতুন ফিচার সম্পর্কে বেশ ভালভাবেই অবগত হবেন। যাই হোক অযথা বড় ভূমিকা না করে, মূল লেখায় অর্থাৎ নতুন ফিচারে চলে যাওয়া যাক।
অ্যান্ড্রয়েড কিউ এর নতুন ফিচার
১. ডার্ক মোড
বর্তমানে অধিকাংশ অ্যাপে ডার্ক মোড ফিচার রয়েছে। আর ডার্ক মোড ফিচারের জনপ্রিয়তা ফেসবুক মেসেঞ্জারের ডার্ক মোড করার মধ্য দিয়ে অনেকেই অনুধাবন করতে পেরেছেন। যারা ডার্ক অ্যান্ড্রয়েডও তার ব্যতিক্রম করেনি, তারা এবার নতুন আপডেটে নিয়ে এসেছে জনপ্রিয় ফিচার ডার্ক মোড।
ডার্ক মোড ফিচারের ফলে আপনার ফোনের ব্যাটারি খরচের পরিমাণ কমে যাবে। ফলে, আগের তুলনায় অনেক দীর্ঘ সময় আপনি ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। তারপরও যে-সব অ্যাপ স্মার্টফোনের ব্যাটারির বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে, সেগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিৎ।
২. আইফোনের মত গেশচার
যদিও এই ফিচারটি অ্যান্ড্রয়েড পাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। তবে অ্যান্ড্রয়েড কিউ বা ১০ এ ভার্সনের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আইকনিক ব্যাক বাটনটি এখন আর খুঁজে পাবেন না। তার পরিবর্তে সোয়াইপ আপ করে হোম স্ক্রিনে আসা এবং সোয়াইপ আপ এবং হোল্ড করে রেখে মাল্টিটাস্কিং করতে পারবেন।
৩. প্রাইভেসি এবং পারমিশন
অ্যান্ড্রয়েড পাইয়ে প্রাইভেসি অনেক উন্নত হলেও এই আপডেট প্রাইভেসি এবং অ্যাপ পারমিশনের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।এই আপডেটের ফলে এখন আর কোন অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকা অবস্থায় আপনার লোকেশন, ক্যামেরা কিংবা অন্য কোন কিছু ব্যবহার করতে পারবে না। কেননা আপডেট নতুন একটি ফিচার যোগ হয়েছে যার মাধ্যমে লোকেশন কিংবা অন্য যেকোন কিছু শুধুমাত্র আপনি যখন অ্যাপ ব্যবহার করবেন তখন পারমিশন পাবে।
এছাড়া কোন অ্যাপ কখন ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, লোকেশন ইত্যাদি ব্যবহার করছে, সবকিছু নোটিফিকেশনের মাধ্যমে জানা যাবে। এমনকি, আপনি আলাদা আলাদা প্রত্যেকটি সেন্সর বন্ধ রাখতে পারবেন। সেটা হতে পারে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, অ্যাকসিলরোমিটারটির কিংবা জাইরোস্কোপের মত চোখে না দেখা সেন্সর।
৪. বাবল বা পপআপ ফিচার
মেসেঞ্জারে মেসেজ আসলে যেমন ছোট করে একটি পপ আপ আসে ফলে আপনি খুব সহজেই মেসেজ আদান প্রদান করতে পারেন। অ্যান্ড্রয়েডে এই অপশনটি যোগ হচ্ছে, তবে আরো বেশি আকর্ষণীয় এবং কার্যকরী রূপে। এটা সরাসরি একটি ছোট উইন্ডোতে রূপান্তরিত হবে যার ফলে আপনি মুভি দেখার সময় একটি ছোট স্ক্রিন জুড়ে মেসেজ আদান প্রদান কিংবা অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন। বাবলটিকে ইচ্ছামত স্ক্রিনের বিভিন্ন পাশে নিতে পারবেন।
৫. ভাঁজকরা ডিসপ্লের উপযোগী
বর্তমানে বাজারে সাধারণ স্মার্টফোনের পাশাপাশি ভাঁজ করা স্মার্টফোনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই যুগের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে তাদের এবারের আপডেট ভাঁজ করা ফোনের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখেছে।এখন আপনি আপনার ইচ্ছামত ফোল্ডেবল ডিভাইসের স্ক্রিনের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।
৬. ডিপ ফটো
ডীপ ফটো ফিচারের ফলে আপনার ছবি গুলোতে স্বয়ংক্রিয় ভাবে বিভিন্ন ধরণের ব্লার ইফেক্ট, বোকেহ অপশন, ডাটা ব্যবহার করে থ্রিডি ইমেজ তৈরি এবং এআর ফটোগ্রাফি সাপোর্ট করবে। এই ফিচারটির ফলে আপনার ছবি গুলোকে আরও বেশি প্রাণবন্ত মনে হবে।
৭. বিল্ট-ইন স্ক্রিন রেকর্ডার
বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের স্ক্রিন রেকর্ড করার জন্য থার্ড পার্টির অ্যাপ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েডের এই ভার্সনে বিল্ট-ইন স্ক্রিন রেকর্ডার রয়েছে। এটা খুব সম্ভবত পাওয়ার বাটন ব্যবহার করে চালু করা যাবে। যদিও এই ফিচারটি অনেক আগে থেকে আইফোনে রয়েছে।
৮. সিম লক
যদিও এটা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য উপকারী কোন ফিচার নয়। এই ফিচারের মাধ্যমে সিম কোম্পানি গুলো সুনির্দিষ্ট ফোনগুলোতে তাদের সিম ব্যবহার বন্ধ করতে পারবে। আর সেই সব বন্ধ সিম আপনি চাইলেও আর আপনার ওই ফোনে ব্যবহার করতে পারবেন না।
৯. ডাউনগ্রেড অ্যাপ আপডেট
আপনি অ্যাপ আপডেট করেছেন কিন্তু আপনি চাচ্ছেন আবার পুনরায় পূর্বের আপডেট ফিরে যেতে। স্বাভাবিকভাবেই অতীতের অ্যান্ড্রয়েড ফোনে এই কাজটা করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু বর্তমান আপডেট এই কাজটা আপনি খুব সহজে করতে পারবেন।
১০. নতুন ফন্ট, আইকন, কালার ইত্যাদি
নতুন এই আপডেটে আপনার ফোনকে আপনি পূর্বের থেকে আরও বেশি কাস্টোমাইজ করতে পারবেন। কেননা এই আপডেটে নতুন ফন্ট, আইকন শেপ, কালার যোগ করা হয়েছে।
এছাড়া ইচ্ছা মতো শেয়ারিং শর্টকাট তৈরি করা যাবে এবং প্রত্যেক অ্যাপের সেটিংস প্যানেল ফ্লোটিং ইউআই আকারে ব্যবহার করা যাবে।
১১. লাইভ ক্যাপশন
লাইভ ক্যাপশন ফিচারের মাধ্যমে আপনি যেকোন অডিও বা ভিডিওর সাবটাইটেল দেখতে পারবেন, এর জন্য কোন ইন্টারনেট কানেকশনের প্রয়োজন হবে না। কেননা অ্যান্ড্রয়েড ১০ এ এই ফিচারটি ফোনে থাকা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির উপর নির্ভর করবে।
১২. ফোকাস মোড
বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষ স্মার্টফোনের মাত্রাতিরিক্ত আসক্ত। আপনি স্মার্টফোনের যেসব অ্যাপে বেশি পরিমাণ আসক্ত কিংবা আপনি যেসব অ্যাপ একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে ব্যবহার করতে চান না, সেসব অ্যাপ বন্ধ রাখা ফিচারটি হল ফোকাস মোড ফিচার। চাইলে মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তি পাবার ১৫টি উপায় নিয়ে আমাদের লেখাটি পড়ে নিতে পারেন।
শেষ কথা
এই ছিল আজকে অ্যান্ড্রয়েড ১০ এর নতুন ফিচার নিয়ে আলোচনা। উপরের সবগুলো ফিচার অ্যান্ড্রয়েডের বেটা ভার্সনে দেয়া হয়েছিল। তবে এই সবগুলো ফিচার পরবর্তী অফিসিয়াল ভার্সনে থাকবে কিনা তা কেবল অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপাররা বলতে পারবে। আর আমাদের অপেক্ষা করতে হবে অ্যান্ড্রয়েড ১০ আপডেট রিলিজের অপেক্ষায়।
Leave a Reply