ইন্টারনেটের দুনিয়া অনেক বড়, এখানে চাহিদার যেমন শেষ নেই তেমনি যোগান দেওয়ার মানুষেরও অভাব নেই। ইন্টারনেটে এমনও অনেক ধরনের কাজ করে মানুষ অর্থ উপার্জন করছে যার কথা শুনলেও অনেকের হাসি পাবে। কিন্তু হাসি আসুক আর যাই আসুক বাস্তবতা এটাই যে অনলাইনে প্রতিনিয়তই নিত্য নতুন কাজের চাহিদা যোগ হচ্ছে যার সংখ্যা হয়তো গুণে শেষ করা যাবে না। আর বিশাল কাজের তালিকা থেকে যদি একটিও আপনার পক্ষে যোগান দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে আপনিও আর ১০ জনের মত ইন্টারনেট থেকে আয় করতে পারবেন। বর্তমান সময়ে অনেকেই অনলাইনে বই বিক্রয় করে আয় করে থাকেন।
বই এর প্রতি মানুষের চাহিদা বা ভালোবাসা আজ থেকে নয়। আজ থেকে অনেক বছর আগেও এর চাহিদা ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বই থাকবে এটিই সত্য। যদি প্রিন্ট করা বইয়ের চাহিদা কমেও আসে তাহলে ডিজিটাল বইয়ের চাহিদা বেড়ে যাবে শতগুনে। কারণ ডিজটাল বইয়ে নেই প্রিন্ট করার খরচ। ফলে বইয়ের মূল্য পাঠকের জন্য সাশ্রয়ী হয়। আর এ কারণেই দিন দিন ডিজিটাল বইয়ের বাজার বড় হয়ে চলেছে।
আরো পড়ুন:
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আয় করার কয়েকটি কৌশল
- এই ওয়েবসাইটে একটা গল্প লিখে আয় করুন ৭৫০-১০০০ ডলার
- ফেসবুক থেকে আয় করার সেরা ১০ উপায়
অনলাইনে বই বিক্রয় করে আয়
বর্তমান সময়ে যে কেউ ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিজের বই প্রকাশ করতে পারে। এজন্য কাউকে আর কোন তৃতীয় পক্ষ বা প্রকাশকের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে হয় না। তাছাড়া বইটিকে সবার কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য খুব বড় ধরনের প্রচারণারও প্রয়োজন পড়ে না। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি একদিকে যেমন আপনার লেখা সবার সামনে তুলে ধরতে পারবেন অন্যদিকে এর পাশাপাশি বই বিক্রয় করেও আয় করতে পারেন এবং নিজেকে একজন অনলাইন ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বই বিক্রয়ের জন্য আপনাকে এর জন্য কোন মার্কেটপ্লেসেও যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। আপনি সরাসরি নিজের ওয়েবসাইট থেকেই ইনকাম করতে পারবেন।
মার্কেটপ্লেস এর মাধ্যমে বই বিক্রয়
ইন্টারনেটের ভিতরে ও বাইরে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ বইয়ের সন্ধান করে থাকে। কারণ একটি বই একজন মানুষকে সুশিক্ষিত, সফল করে তোলাসহ মানুষের জ্ঞান অর্জনের পিপাসাকে নিবারণ করে থাকে। ইন্টারনেটে এমন হাজারো ওয়েবসাইট রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি আপনার বইটি অনলাইনে বিক্রয় করতে পারবেন। এমন সবচেয়ে জনপ্রিয় ২টি মার্কেটপ্লেস নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
Payhip
ইবুক বিক্রয়য়ের জন্য পে-হিপ খুবই জনপ্রিয়। আপনি ইচ্ছা করলেই এখানে ই-বুকসহ যে কোন ধরনের ডাউনলোড যোগ্য ডিজিটাল পণ্য বিক্রয় করতে পারবেন। পে-হিপ আপনার একাউন্টের বিপরীতে আপনাকে তাদের ওয়েবসাইটে একটি ফ্রি সেলপেজ এবং বিভিন্ন ধরনের পাবলিশিং টুল দিবে যা ব্যবহার করে আপনি আপনার বইগুলি বিক্রয়, অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম, ডিসকাউন্ট ইত্যাদি করতে পারবেন। আপনার মোট বিক্রয়য়ের ৫ শতাংশ পে-হিপ তার কমিশন হিসেবে রেখে দেয়।
Amazon Kindle Direct Publish
Amazon Kindle Direct Publish এর মাধ্যমে আপনি আপনার বইটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ই-কমার্স স্টোর আ্যামাজনে ফ্রিতে পাবলিশ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি অ্যামাজনের মত বড় প্লাটফর্মকে ব্যবহারের মাধ্যমে খুব কম সময়েই খ্যাতি লাভ করতে পারবেন, পাশাপাশি আপনার বইয়ের মোট বিক্রয়মূল্যের ৭০ ভাগ আ্যামাজন আপনাকে দিবে। উপরের ২টি ছাড়াও আপনারা Blurb, Lulu, Tradebit, NOOK Press, Kobo Writing Life, Smashwords, Scribd, Payspree এর মাধ্যমেও আপনার বইটি অনলাইনে বিক্রয় করতে পারেন।
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বই বিক্রয়
আপনি চাইলে সহজেই ইন্টারনেটে একটি ওয়েবসাইট তৈরীর মাধ্যমে মানুষের কাছে আপনার বই পৌছাতে পারেন। একটি ওয়েবসাইট একজন নতুন পাঠকের কাছে পৌছানোর এবং একজন পাঠককে গ্রাহকে পরিণত করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। এখন এখানে চ্যালেঞ্জ হিসাবে যে বিষয়টিকে নিতে হবে তা হলো এই পাঠকদের আপনার ওয়েবসাইটে কিভাবে নিয়ে যাবেন। ভয়ের কোন কারণ নেই আপনি খুব সহজেই সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার করে আপনার কাঙ্খিত ভিজিটরদের আপনার ওয়েবসাইট পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেন। সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আপনার বইটি সম্পর্কে মানুষদের জানান।
এক্ষেত্রে আপনি যদি নিজে একজন লেখক না হয়ে থাকেন তাহলেও কোন সমস্যা নেই। আপনার ওয়েবসাইটের আর্টিকেল পড়ে যদি একজন পাঠকের মনে হয় যে আপনার বই সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা আছে তাহলে আপনার সুপারিশকৃত যে কোন বই পাঠকেরা কিনবে। এক্ষেত্রে আপনাকে যা করতে হবে তা হলো আপনার পছন্দমতো নাম দিয়ে একটি ডোমেইন কিনুন। একটি ভালো কোম্পানী থেকে হোস্টিং কিনে নিন। তারপর থিমফরেষ্ট বা অন্য যে কোন মার্কেটপ্লেস থেকে একটি প্রিমিয়াম ওয়ার্ডপ্রেস থিম কিনে ফেলুন। থিমটি সেটআপ হয়ে গেলে কিছু সংখ্যাক ভালো মানের আর্টিকেল দিয়ে আপনার ওয়েবসাইটকে লাইভ করুন।
আপনি যদি নিজে আর্টিকেল লিখতে পারেন তাহলে তো খুবই ভালো কথা আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে ইন্টারনেটের যে কোন ফ্রিল্যান্সারকে দিয়ে কিছু আর্টিকেল লিখিয়ে নিন। তারপর আপনার আর্টিকেলের সাথে মিল রেখে কিওয়ার্ড রিসার্চ করে ফেলুন এবং সে অনুযায়ী নিয়মিত পোষ্ট করা শুরু করুন। দেখবেন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপনার সাইটটি গুগলে র্যাংক করতে সক্ষম হয়েছে আর একবার যদি আপনার ওয়েবসাইট গুগলে র্যাংক করে তাহলে আপনার ভিজিটরের কোন অভাব হবে না। আর যত বেশি ভিজিটর তত বেশি পরিমাণ টাকা।
আপনি যদি মনে করেন যে আপনার নিজের কাছে এমন কোন বই নেই যে আপনি তা বিক্রয় করবেন তাহলেও চিন্তার কারণ নেই। আপনি যদি চান তাহলে আপনি অন্যের লেখা বইও বিক্রয় করে তা থেকে কমিশন হিসেবে ভালো পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন যাকে ফ্রিল্যান্সিং এর ভাষায় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে।
যদি সহজ ভাষায় বোঝাই তাহলে ধরে নিন আপনি উপরের পদ্ধতিগুলো অনুসরন করে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করে ফেললেন যেখানে আপনি বিভিন্ন ভালো লেখকের বই রিভিউ করেন বা সে সম্পর্কে বিভিন্ন আর্টিকেল লেখেন। আপনার সাইটটি যখন র্যাংক করে যাবে তখন আপনি ইচ্ছা করলে এ্যামাজন থেকে অ্যাফিলিয়েট লিংক নিয়ে বই বিক্রয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইট হয়ে যে সব ভিজিটর এ্যামাজনে যাবে তারা বইটি ক্রয় করলে মোট বিক্রয়মূল্যের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনি কমিশন হিসাবে পাবেন।
কি খুব কম মনে হচ্ছে? আরেকটু বিস্তারিতভাবে বলি। ধরুন, আপনার ওয়েবসাইটের একটি আর্টিকেল পোষ্ট করেছেন যার মাসিক সার্চ ভলিউম ১৫০০। এখন আপনার কাছে ১৫০০ খুব কম মনে হলেও আসলে কিন্তু ব্যপারটি মোটেও সে রকম নয়। আপনার সাইটটি যদি র্যাংক করে তাহলে এই ১৫০০ জন ভিজিটরই আপনি পাবেন কারণ আপনার ওয়েবসাইট থেকে যদি তার চাহিদা মিটে যায় তাহলে সে কেন ভিজিট করবে না? আর এই ১৫০০ জন ভিজিটরের মধ্যে যদি ৫০০ জনও আমাজনে যায় তাহলে তারা বই কিনলে তার মোটা একটি কমিশন আপনি পাবেন। ভাবার প্রয়োজন নেই, কারণ কেনার ইচ্ছা না থাকলে মানুষ ইন্টারনেটে সার্চ করে না।
এতো গেল একটি আর্টিকেলের হিসাব, এ রকম যত আর্টিকেল আপনার ওয়েবসাইটে থাকবে সেই হিসাবে আপনার ওয়েবসাইটে আপনি বই বিক্রয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসেই টাকা ইনকাম করতে থাকবেন।
তবে এধরনের ব্যবসা করার জন্য কিছু ব্যাপারের দিকে লক্ষ্য রাখা খুবই জরুরী তা না হলে লাভের চাইতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। প্রথমত, ডোমেইন, হোস্টিং, থিম ও আর্টিকেল কেনার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট সার্চ করুন ও সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে এগুলো ক্রয় করুন। ওয়েসাইট বিজনেস এর ক্ষেত্রে প্রতিটি টাকা খুবই মূল্যবান। দ্বিতীয়ত, আপনাকে কি-ওয়ার্ড নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুব বেশি যত্নবান হতে হবে। আপনি যদি ভুল করে এমন কোন কি-ওয়ার্ড নির্বাচন করেন যার সার্চ ভলিউম অনেক বেশি তাহলে আপনার ওয়েবসাইট র্যাংক করাতে অনেক বেশি কষ্ট হবে আর যদি আপনি নতুন হন তাহলে র্যাংক না করার সম্ভাবনাটাই বেশি হয়ে যাবে। তৃতীয়ত, আর্টিকেল লেখার সময় কি-ওয়ার্ডের দিকে লক্ষ্য রেখে আর্টিকেল লিখুন।
আমি জানি এরপরেও অনেকের মনে প্রশ্ন থেকে যাবে যে, আমার ওয়েবসাইটে ভিজিটর আসার পরেও যদি বই বিক্রয় না হয়? উত্তরটা আমি দিয়ে দিচ্ছি। ওয়েবসাইটে ভিজিটর থাকা স্বত্বেও সেটি থেকে সেল আসবে না এমন উদাহরণ কোথাও নেই, তারপরেও যদি আপনার ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে এমনটি দুর্ভাগ্যবশত হয়েই যায় তাহলে আপনার ওয়েবসাইট থেকে অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করুন আর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করতে থাকুন। তাই দেরি না করে আজই একটি ভালো নাম নির্বাচন করে ডোমেইন, হোস্টিং আর থিম কিনে ফেলুন।
সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বই বিক্রয়
প্রথমে যে পদ্ধতিটি নিয়ে আলোচনা করলাম তার জন্য আপনার কোন বই কেনা লাগবে না বা আপনার কাছে কোন বই না থাকলেও চলবে। এবার ধরা যাক আপনার সংগ্রহে অনেক বই রয়েছে বা আপনি একজন বই বিক্রেতা, এখন আপনি চাইছেন ফেসবুক বা অন্য কোন সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনার বইগুলি বিক্রয় করতে। এখানেও পদ্ধতিটি খুবই সহজ।
বর্তমানে প্রত্যেকটি সোস্যাল মিডিয়াতেই গ্রুপ তৈরী করার সুবিধা রয়েছে। একটি বাই এন্ড সেল গ্রুপ তৈরী করে ফেলুন এবং আপনার পরিচিত সকলকে বলুন যে তারাও যেন তাদের পরিচিত সবাইকে গ্রুপে যোগ করে নেয়। তারপর গ্রুপে এ্যাকটিভ থাকুন এবং নিয়মিত পোষ্ট করুন। বই বিষয়ক বিভিন্ন কথাবার্তা গ্রুপে আলোচনা করুন এবং জানার চেষ্টা করুন যে গ্রুপ মেম্বারদের আগ্রহ কোন ধরনের বইগুলিতে বেশি। এরপর গ্রুপে বইগুলোর ছবি ও দামসহ সেল পোষ্ট দিন। যদি সম্ভব হয় তাহলে যারা কাছাকাছি রয়েছে তাদের জন্য হোম ডেলিভারী এবং যারা দুরে তাদের জন্য কুরিয়ারের মাধ্যমে ডেলিভারীর সুবিধা রাখুন। দেখবেন খুব কম সময়ের মধ্যেই সাড়া পাচ্ছেন।
তবে এ পদ্ধতির ক্ষেত্রে গ্রুপটিকে নিয়ন্ত্রণ করা, গ্রুপের মেম্বারদের সাথে কথা বলা, তাদের ইচ্ছা আগ্রহের প্রতি খেয়াল রেখে সে ধরণের বইয়ের সেল পোষ্ট করা ইত্যাদি ব্যপার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে কোনটি যদি আপনি না করেন তাহলে ধীরে ধীরে আপনার গ্রুপ মেম্বার এর সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে আর যদি তা করেন তাহলে দেখবেন অনেকেই আপনার গ্রুপে যোগ দেবে।
সবশেষে বলা যায় যে, ইন্টারনেটের পৃথিবীতে একটি কাজ করার জন্য আপনাকে কখনো একটি পদ্ধতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে না। আপনাকে শুধু নির্ধারন করতে হবে যে আপনি কিভাবে উপার্জন করতে চান। একটু গভীরভাবে ভেবে দেখলেই আপনি এমন হাজারো পদ্ধতি খুজে পাবেন যা থেকে আপনি আপনার লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হবেন আর তা যদি অনলাইনে বই বিক্রয় করে আয় করার মত কাজ হয়ে থাকে তাহলে আপনি অনেক সৌভাগ্যবান। কারণ এ ধরনের কাজে সহযোগীতা করার জন্য বা সম্পাদন করার জন্য হাজারো ওয়েবসাইট আগে থেকেই ইন্টারনেটে রয়েছে। এখন প্রথমে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি কি নিজের বইগুলি ইন্টারনেটে বিক্রয় করবেন না অন্যের লেখা বই অ্যাফিলিয়েশনের মাধ্যমে বিক্রয় করবেন।
জাহিদ says
আমিও আমার নিজের জন্য একটি ওয়েবসাইট খুলতে চাই, যেখানে আমি বই বিক্রি করবো।