পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশের মতো যেমন আমাদের দেশেও অনেক গাড়ি রয়েছে, তেমনি রয়েছে গাড়িগুলোর জন্যে অটো ইন্সুরেন্স ব্যবস্থা। এ ধরণের ব্যবস্থায় নানা ধরণের ক্ষতির জন্যে ইন্সুরেন্স কোম্পানী গাড়ির মালিককে আর্থিক ক্ষতি পূরণ দিয়ে থাকে।
গাড়ি কোন দূর্ঘটনার শিকার হলে বেশিরভাগ সময় গাড়ির মালিকের সঙ্গে ইন্সুরেন্স কোম্পানীর অ্যাগ্রিমেন্ট অনুযায়ী গাড়ির ক্ষতিপূরণ হিসেবে গাড়ি ঠিকঠাক করার খরচ বহন করা হয়।
মূলত, অটো ইন্সুরেন্সের মাধ্যমে গাড়ির মালিক এবং কোম্পানী উভয়ই লাভবান হয়। বাইরের দেশে গাড়ি থাকা মানেই গাড়ির ইন্সুরেন্স থাকা। সম্ভবত বড় বড় কোন দেশেই এমন একটা গাড়িও পাওয়া যাবে না, যেটার জন্যে ইন্সুরেন্স করা হয় না। কার ইন্সুরেন্স সব দেশেই জনপ্রিয় একটি ব্যবস্থা। আমাদের দেশেও ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
অটো ইন্সুরেন্স কি?
অটো ইন্সুরেন্স কার, ট্রাক, মোটর সাইকেল ও আরো নানা ধরণের গাড়ির ইন্সুরেন্স। এটিকে কার ইন্সুরেন্স কিংবা মোটর ইন্সুরেন্সও বলা হয়। এ ধরণের ইন্সুরেন্সের প্রাথমিক ব্যবহারই হচ্ছে গাড়ির দূর্ঘটনা ও আর্থিক ক্ষতির বিপরীতে প্রটেকশন দেয়া।
এছাড়াও, গাড়ি চুরি, ট্রাফিক কলিশন ও অন্যান্য নানা ধরণের ক্ষতির জন্যে আর্থিক ব্যবস্থাপনাই অটো বা কার ইন্সুরেন্সের মূল উদ্দেশ্য। তবে, গাড়ির জন্যে নানা ধরণের ইন্সুরেন্স ব্যবস্থা রয়েছে এবং গাড়ির মালিক আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকেন সেই মোতাবেক।
অটো ইন্সুরেন্সের ইতিহাস
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পরই অটো ইন্সুরেন্স ধারণাটির উদয় হয় এবং খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই ব্যবস্থাটি জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে। কোম্পানীগুলো মাসিক, বাৎসরিক কিংবা এক কালীন একটা ফি গ্রহণ করে গাড়ির মালিকের কাছ থেকে। আর গাড়ির মালিকও নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করেন এই ভেবে যে, তার গাড়িটি যদি দূর্ঘটনার সন্মুখীণ হয় কিংবা কোন যন্ত্রপাতি ড্যামেজ হয়ে যায়, তবে এ নিয়ে তাকে চিন্ত করতে হবে না, ইন্সুরেন্স কোম্পানীই সমস্ত দায়ভার গ্রহণ করবে।
তবে, তখনকার সময় কার ইন্সুরেন্স করা বাধ্যতামূলক ছিল না। এটাকে প্রথম বাধ্যতামূলক করা হয় ইংল্যান্ডে। ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ড যে ট্রাফিক অ্যাক্ট প্রণয়ন করে, সেটাতেই অটো ইন্সুরেন্স করাকে বাধ্যমূলক করা হয়। এরপর ১৯৩৯ সালে জার্মাণীতে কার ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়। এর নাম দেয়া হয় অ্যাক্ট অন দ্যা ইম্পিমেনটেশন অব কম্পালসারি ইন্সুরেন্স ফর মোটর ভেহিক ওনার্স।
এখন তো প্রায় পৃথিবীর সব দেশেই অটো ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক। তবে, বিভিন্ন দেশে এই আইনটির মধ্যে কিছুটা তারতম্য রয়েছে। আমাদের দেশেও অটো বা ভেহিকল ইন্সুরেন্স আইন রয়েছে। তবে তা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
অটো ইন্সুরেন্সের প্রকারভেদ
তিন ধরণের অটো বা কার ইন্সুরেন্স রয়েছে। কার ইন্সুরেন্স করার সময় এগুলো থেকে আপনি যে কোনটি কিংবা একের অধিক বেছে নিতে পারেন।
- থার্ড পার্টি
- থার্ড পার্টি, ফায়ার এন্ড থেপ্ট
- কম্প্রিহেনসিভ
থার্ড পার্টি: এটিই হচ্ছে আইন অনুযায়ী সর্বনিম্ন রিকোয়ারমেন্ট। কিন্তু এটি সব সময় সস্তা নয়। এটি গাড়িতে থাকা ড্রাইভার ছাড়াও অন্যান্য যাত্রীদের দূর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করে।
থার্ড পার্টি, ফায়ার এন্ড থেপ্ট: এটি প্রায় থার্ড পার্টির মতোই। তবে এটি ড্রাইভার ও যাত্রীদের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি গাড়ির যে কোন ধরণের রিপেয়ারের অর্থও বহন করে থাকে। এমনকি, এ ধরণের ইন্সুরেন্সের আওতায় থাকলে, আপনার গাড়িটি যদি চুরিও হয়ে যায়, ইন্সুরেন্স কোম্পানী আপনাকে নতুন গাড়ি কিনে দিতে বাধ্য।
কম্প্রিহেনসিভ: এটিই হচ্ছে গাড়ির মালিকের জন্যে সর্বোচ্চ সুবিধার ইন্সুরেন্স। এটি গাড়ির ড্যামেজের জন্যে অর্থ প্রদান করে। সেই সাথে দূর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ দেয়। এমনকি, গাড়িতে থাকা লোকদের চিকিৎসার ভারও বহন করে, যদি গাড়িটি দূর্ঘটনার শিকার হয় এবং লোকজন আহত হয়।
কেন আপনার কার ইন্সুরেন্স প্রয়োজন
প্রথমত কার ইন্সুরেন্স এক ধরণের আইনগত প্রয়োজনীয়তা। দ্বিতীয়ত এটি আপনার দূর্ঘটনা জনিত আর্থিক ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা দেয়। তৃতীয়ত, অটো ইন্সুরেন্স গাড়ির ড্রাইভার ও যাত্রীদের চিকিৎসার ভার গ্রহণ করে। অর্থাৎ, ইন্সুরেন্স কোম্পানী দূর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সকল মানুষের চিকিৎসার খরচ বহন করতে বাধ্য থাকে।
দূর্ঘটনা ঘটতেই পারে আর সে দূর্ঘটনার জন্যে সব ধরণের ক্ষতিপূরণ পেতেই আপনার কার ইন্সুরেন্স করা প্রয়োজন।
অটো ইন্সুরেন্স না করলে কি হবে
আমাদের দেশে কার ইন্সুরেন্স যেহেতু সম্পূর্ণ বাধ্যতামূলক নয়, সেহেতু আপনি না চাইলে না করেই থাকতে পারেন। এতে হয়তো আপনার কোন সমস্যা নেই, আপনি বড়জোর ইন্সুরেন্স কোম্পানীর ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হবেন। কিন্তু আপনি মূলত বঞ্চিত করবেন আপনার ড্রাইভারকে।
আপনার হয়তো যথেষ্ট্য পরিমাণ টাকা পয়সা রয়েছে এবং আপনি ইন্সুরেন্স কোম্পানীর মূখাপেক্ষী না। ওদের দেয়া সামান্য ক্ষতিপূরণ আপনার তেমন একটা কাজে লাগবে না। কিন্তু আপনার ড্রাইভারের কাজে লাগবে, যদি আপনার ইন্সুরেন্স করা থাকে।
Leave a Reply